নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এখনই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। তা না হলে ঈদের পর পরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর আদেশ দিতে পারে বিইআরসি; যা হবে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।’
বুধবার (২৭ এপ্রিল) কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর উদ্যোগে ‘ন্যায্যতা উপেক্ষা করে গ্যাস বাণিজ্য কার স্বার্থে’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, ‘স্পট মার্কেট থেকে অতিরিক্ত দামে এলএনজি আমদানির অজুহাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও যুক্তি নেই। এই অল্প পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশেই উৎপাদন বাড়িয়ে পূরণ করা সম্ভব। এ জন্য প্রথমেই গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং অবশ্যই নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘মূল্য বৃদ্ধির এখন সময় না। দেশে এখন যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে—আগুনে ঘি ঢালার মতো। এখন যদি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আশঙ্কা করছি, ঈদের পরপরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর আদেশ দিতে পারে বিইআরসি; যা হবে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির যে আগ্রহ, সেই আগ্রহ দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে আমাদের নেই। নিজেদের কোম্পানির সক্ষমতা না বাড়িয়ে আমরা বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে গ্যাস তুলছি। গত ২০ বছরে আমরা মাত্র ২৮টি কূপ খনন করেছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে ৫টিতে কূপ খনন করলে একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়, বাংলাদেশের ৩টিতে খনন করলে গড়ে একটিতে পাওয়া যায়। আমরা কতটা সম্ভবনাময়। এদিকে সাগরে গ্যাস আছে; ভারত ও মিয়ানমার তুলছে। কিন্তু কী কারণে যেন বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে না, তা এক রহস্য।’
গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা যদি সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস পেতে চাই, তাহলে আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা আশা করছি, এই প্রচেষ্টা সরকার নেবে। জোরদার করবে, বিলম্ব অনেক হয়েছে, আর যেন না হয়। বছরে কমপক্ষে ১০টি কূপ খনন করবে বলে আশা করছি।’
ক্যাবের সহ-সভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানোর গণশুনানিতে কোম্পানিগুলো ১১৭ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বিইআরসির কারিগরি কমিটি ৩ ভাগ এবং ক্যাব ১.৬ ভাগ গ্যাসের দাম কমানোর প্রস্তাব করেছে। শুনানিতে কোনও কোম্পানি এবং কারিগরি কমিটির প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত হয়নি। এই অবস্থায় কমিশন দাম বাড়ালে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত তৈরি করা সেবার স্বার্থে নয়, অসাধু ব্যবসার স্বার্থে। এমন অসাধু ব্যবসা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিইআরসি নিষ্ক্রিয়। ভোক্তা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন। বিইআরসি’র এই নিষ্ক্রিয়তা গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এক বিরাট বাধা।
মূল্যবৃদ্ধি না করেও নানা ধরনের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় দ্বারা ভর্তুকি কমানো সম্ভব। অথচ মূল্যবৃদ্ধি ব্যতীত অন্য কোনও কিছু বিইআরসি’র বিবেচনায় নেই।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, ‘যদি আমরা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করি, তাহলে এর মধ্যে স্পট মার্কেট থেকে আনা হয় গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই অল্প গ্যাসের দামই সবচেয়ে বেশি। এরই অজুহাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আলোচনা উঠেছে। অথচ আমরা স্পট থেকে না এনে বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে পারি। সবার আগে চুরি বন্ধ করতে হবে। বছরে প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হয়। অন্যদিকে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা কম তুলছি। এই গ্যাস আমরা কেন তুলছি না সেটা চিহ্নিত করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া ওয়ার্কওভার কূপ করে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। সম্প্রতি সালদা, কৈলাশটিলা থেকে ওয়ার্কওভার করে পুরানো কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে আমাদের এমন কিছু গ্যাস ক্ষেত্র আছে, যেখানে এখনই উত্তোলন শুরু করলে এখনই গ্যাস পাওয়া সম্ভব। যেমন ছাতক গ্যাসক্ষেত্র, কুপ খনন করলেই গ্যাস তোলা সম্ভব। এছাড়া ফেনী, ভোলা গ্যাসক্ষেত্রেও গ্যাস পড়ে আছে। স্পট মার্কেট থেকে না কিনে অতি সহজে এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করা সম্ভব। আর এর ফলে গ্যাসের দাম বাড়ানোরও আর প্রয়োজন হবে না।’