।। জ্বালানি ডেস্ক ।।
গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণের যে নতুন মূল্যহার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ঘোষণা করেছে, তার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। গত বছর ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ‘প্রাকৃতিক গ্যাস মূল্যহার বণ্টন’ শীর্ষক ওই আদেশ কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, কমিশনের চেয়ারম্যান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ১৯৯৩ সালে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করে আমদানি করা গ্যাসে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে সংগৃহীত অর্থ ‘গ্যাসের মূল্যহার বন্টন’-এ সমন্বয় করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
গ্যাসের সঞ্চালন ট্যারিফ ও বিতরণ ব্যায় বাড়ানোর জন্য গত বছর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আবেদন করে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণকারী কোম্পানিগুলো। সেই প্রেক্ষিতে গত বছরের জুনে কমিশন ৬ দিন শুনানি করে। পরে ১৬ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানায়, গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়ার পরও সার্বিক বিবেচনায় কমিশন ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কমিশন ওইদিন ‘প্রাকৃতিক গ্যাস মূল্যহার বণ্টন’ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে, যেখানে বলা হয়, “প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণের উপর গণশুনানি অন্তে ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার অপরিবর্তিত রাখা হল।”
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম না বাড়লেও গ্যাসের উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয়ে প্রায় সতেরশ কোটি টাকা ভর্তুকি বেড়েছে।” সেটি চ্যালেঞ্জ করেই গত সপ্তাহে হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন ক্যাবের আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
রোববার ক্যাবের পক্ষে ওই আবেদনের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই চার্জ নির্ধারণ প্রক্রিয়াটার মধ্যে ধরনের বড় রকমের গলদ ও গোঁজামিল আছে। যে বিষয়গুলো কমিশনের শুনানিতে আসেনি, অথচ বিভিন্ন হেডে এ রকম চার্জগুলো ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়েছে। এর ফলে গ্যাসের দাম এই মুহূর্তে না বাড়লেও পরে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এগুলো নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করবে।”
এ আইনজীবী বলেন, গাস নিরাপত্তা তহবিলে ইতোমধ্যে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার মত জমা আছে। সেই টাকা সমন্বয় করা হলে সরকারের কাছ থেকে আর ভর্তুকি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। ক্যাবের পক্ষ থেকে শুনানিতে এই যুক্তিই দেখানো হয়েছে।
সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিলে কী সমস্যা হবে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, “সরকার যে ভর্তুকিটা দিচ্ছে এই টাকাটা আসলে জনগণের কাছ থেকেই নেওয়া হবে। কিন্তু আমার তহবিলে টাকা থাকা অবস্থায় আবার কেন আমি ভর্তুকি বাড়াব?
“দ্বিতীয় কথা হল, ১৯৯৩ সালে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে আদেশ দিয়েছিল, আমদানি করা গ্যাসের ওপর কোনো রকম মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা যাবে না। সেই আদেশের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১৯৯৩ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সরকার মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে আসছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৩ হাজার ২৭৭ কোটি ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯০ টাকা ৩৮ পয়সা বিইআরসি আহরণ করেছে, এই টাকাটা কোথায় “
ক্যাবের দাবি ছিল, যদি ওই টাকা সমন্বয় করা হয়, তাহলে ‘ভর্তুর্কির অজুহাতে’ চার্জ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়বে না।