চালের বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে পারছে না সরকার। কারণে অকারণে বাড়ছে চালের দাম। উৎপাদন বাড়িয়ে, বিদেশ থেকে আমদানি করিয়েও বাজারে চালের দাম কমানো যায়নি। গতবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর চালের দর নির্ধারণ করে দিলেও সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে পাত্তা দেননি ব্যবসায়ীরা।
চালের বাজার দেখার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, বলছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য- বাম্পার ফলনের পরেও চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি কাম্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- তাহলে চালের বাজার দেখার দায়িত্ব কার?
ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এর জন্য কেউ কেউ চালের উৎপাদন কম হওয়া, সরবরাহ কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। আবার কেউ করোনার কারণে পরিবহন খরচকে দায়ী করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত একেবারেই কমে গেছে, যা অশুভ লক্ষণ। সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত না বাড়লে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না।
সরকারি গুদামে ১৬ জুন তারিখে মজুতকৃত চালের পরিমাণ ৯ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। অপরদিকে সর্বশেষ ১৩ জুন পর্যন্ত বোরো ধান সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন। সেদ্ধ বোরো চাল সংগ্রহ হয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন ও ৩০ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন বোরো আতপ চাল সংগৃহীত হয়েছে।
অতিবৃষ্টি, করোনায় শ্রমিকের অভাব ও সর্বশেষ খড়ায় গতবছর আমনের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে বাজারে চালের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বোরোর বাম্পার ফলন ও আমদানি করেও সেই সংকট মেটানো সম্ভব হয়নি। আমদানি করা চাল বাজারে উঠেছে। তার পরেও বাড়ছে চালের দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা একে কারসাজি বলছেন। মোকামের ব্যবসায়ী যারা মিলার তারা এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে মিলাররা বলছেন, মোকামে কোনও কারসাজি নাই। যতো কারসাজি তা আড়তে। রাজধানীর বাবুবাজার, মোহম্মদপুর, গুলশান মার্কেটের চাল ব্যবসায়ীরা কারসাজির সঙ্গে জড়িত বলে তাদের অভিযোগ।
মিলার ও আড়ৎদাররাও একে অপরকে দুষছেন। আবার উভয় পক্ষই বলছেন, নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। আগামী সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সব ধরনের চালের দাম কমতে শুরু করবে। কিন্তু কমছে না চালের দাম।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, চালের বাজারের বিষয়টি মুলত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। তারাই বিষযটি সম্পর্ক ভালো বলতে পারবেন। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নাই। আমাদের বোরোর উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। গত বছরের সংকট এড়াতে আমদানিও করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণে চাল। তাই কোনওভাবেই চালের বাজারে অস্থিরতা গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকারের নিজস্ব মজুদ বাড়াতে বোরো সংগ্রহ চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই সরকারি নিজস্ব চালের মজুদ ১০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। আশা করছি এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বোরো সংগ্রহ করতে পারবো। লক্ষ্য অনুযায়ী ১৭ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে, বলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।