যশোর জেলা প্রতিনিধি,
যশোরে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের শুরুতেই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত জমির ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দাবি করে জমির মালিকরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাদের দাবি, অধিগ্রহণ করা জমির যে দাম ধরা হয়েছে তা বাজার মূল্যের থেকে তিনগুণ কম।
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ অক্টোবর ইপিজেডের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল কবির জেলা প্রশাসক বরাবর অভয়নগরের প্রেমবাগ এলাকায় ৫০২ একর ৬১ শতক ভূমি অধিগ্রহণে চিঠি দেন। এরপর জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জমির মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়। যশোর জেলায় শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অভয়নগরের প্রেমবাগ, মাগুরা, রাজাপুর, চেঙ্গুটিয়া, আরাজি বাহিরঘাট, বালিয়াডাঙ্গা, মহাকাল এবং আমডাঙ্গা মৌজার ভূমি অধিগ্রহণে এখন ‘যৌথ তদন্ত’ চলছে।
এদিকে অধিগ্রহণকৃত জমির ন্যায্য মূল্য, ঘেরের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না বলে দাবি করছেন জমির মালিকরা। রোববার দুপুরে তারা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, যশোরে যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) করা হচ্ছে সেটা বিল ধলিয়ার মধ্যে। এ বিলে আটটি মৌজা রয়েছে। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গা মৌজার ১১২ একর ৭৭ শতক, আরাজি বাহিরঘাট মৌজায় ৯৯ একর ৪৬ শতক, পোমভাগ মৌজায় ১৭১ একর ৮৮ শতক, রাজাপুর মৌজায় ৯০ একর ৭৫ শতক, চেঙ্গুটিয়া মৌজায় ২৫ একর ২৪ শতক, মাগুরা মৌজায় ৯৩ শতক, মহাখাল মৌজায় এক একর ৪৫ শতক ও আমডাঙ্গা মৌজায় ১৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
কিন্তু পোমভাগ মৌজায় সরকার নির্ধারিত গড় মূল্য ২২ হাজার ৮৯১ টাকা। আর অন্য মৌজায় সর্বনিম্ন ৮ হাজার ৭১৬ ও সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৩৪৬ টাকা যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নির্ধারণ করেছে সরকার। একই বিলের জমি হলেও মৌজা আলাদা হওয়ায় দাম কম। আবার বাজারমূল্যও এখন তিন-চার গুণ বেশি। এতে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি জমির মালিকদের।
বালিয়াডাঙ্গা মৌজার জমির মালিক সফি কামাল বলেন, ধলিয়ার বিলে ঘের ও ধানি জমি রয়েছে। একই বিলে ৮টি মৌজা থাকলেও দাম আলাদা। সরকার কর্তৃক যে দাম ধরা হয়েছে সেটাও ৬ বছর আগে। তিনি আরও বলেন, ইপিজেডের জন্য অধিগ্রহণ করা বালিয়াডাঙ্গা মৌজার জমির আংশিক নওয়াপাড়া পৌরসভার মধ্যে। সেখানে সরকার শতক হিসেবে গড় দাম ধরেছে ৮ হাজার ৭১৬ টাকা। সরকার নির্ধারিত এই রেটেই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। অথচ এখানে জমির বাজার মূল্য সরকার নির্ধারিত দামের ৩ গুণ।
একই কথা বলছেন রাজাপুর মৌজার জমির মালিক সমীর ঘোষ ও চেঙ্গুটিয়া মৌজার জমির মালিক শেখর বর্মন। তারা জানিয়েছেন, সরকার ৬ বছর আগে জমির যে দাম নির্ধারণ করেছে সেটা এই সময় কল্পনাও করা যাবে না।
জমির আরেক মালিক রেজওয়ার মুন্সি জানান, এই ৮টি মৌজার অবস্থান যশোর-খুলনা মহাসড়কের খুব কাছে আধা কিলোমিটারের মধ্যে। এই বিলে কেউ মাছ চাষ, আবার কেউ ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জমির ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা আর জমি কিনতে পারবেন না। কর্মসংস্থানের পথও বন্ধ হয়ে যাবে।
চানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের কথা শুনেছি। তাদের দাবিগুলো যতটুকু যৌক্তিক বা আইনের মধ্যে পড়ে ততটুকু করা সম্ভব। আইনের বাইরে জমির দাম নির্ধারণ করে বাড়তি কিছু করার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপিত হলে লাখো মানুষ কাজ পাবেন। এলাকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। এজন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা দরকার। দাপ্তরিক কাজ এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি যৌথ তদন্ত চলছে।