অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় নাগরবাসীকে। এরমধ্যে নগরীর নালা-নর্দমা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রতি বছরই বর্ষায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বর্ষা মানেই রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। এ মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি এবং ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একটু ভারী বর্ষণে রাজধানীবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা শহরের সবচেয়ে সমন্বয়হীন অবহেলিত একটি খাত হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন। ছয়টি সংস্থা ও বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকা, ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত পরিষ্কারের না করা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা। ভারী বৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ধারণের জন্য শহরে উপযুক্ত জলাধার নেই। আর ভারী বৃষ্টির পানি টেনে নেয়ার পাম্পগুলোর ক্ষমতাও সীমিত। যে কারণে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাযথ ও আধুনিকায়ন জরুরি।
সার্বিকভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নগরীর জলাবদ্ধতা ও নগর বন্যা দূর করার জন্য করণীয় কী হতে পারে, তার একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দেয়া হল।
১. ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান ২০১৫-এ মোট ৪৭টি খালের কথা উল্লেখ আছে। এ খালগুলো উদ্ধার করতে হবে এবং এর সীমানা নির্ধারণ করা দরকার।
২. জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ অনুসারে গুরুত্বপূর্ণ শহর ও রাজধানী অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে বন্যামুক্ত করার কথা বলা হয়েছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৩. ঢাকার পূর্বদিকের প্রস্তাবিত ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড ফ্লাড কন্ট্রোল এম্ব্যাঙ্কমেন্ট-কাম-ইস্টার্ন-বাইপাস রোড মাল্টিপারপাস’ প্রকল্পটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তবে প্রকল্পটি পরিবেশের সঙ্গে সহনীয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিমুক্ত হওয়া দরকার।
৪. প্রাকৃতিক খাল, জলাশয় ও ডোবার সীমানা নির্ধারণ ও সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। বক্স কালভার্টের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খালের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৫. কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ময়লা-আবর্জনা যাতে নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালে ভরাট হতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
৬. বর্ষা মৌসুমের আগেই নর্দমা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। নর্দমা নির্মাণ, মেরামত ও খননের কাজ শুকনো মৌসুমের মধ্যেই করা জরুরি।
৭. ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হাতে নর্দমা, প্রাকৃতিক খাল, স্লুইস গেট, বাঁধ, রেগুলেটর ও পাম্প হাউসের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পণ করা দরকার।
৮. ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ড্রেনেজ সার্কেল স্থাপন করা জরুরি। সেখানে নগর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার ৫ বছর অন্তর অন্তর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
৯. আবহাওয়া অধিদফতরের সহায়তায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে একটি নগর বন্যার কার্যকর আগাম সতর্কতা মডেলিং সেল খোলা দরকার।
১০. নগর বন্যার আগাম সতর্কতা অনুসারে স্লুইস গেট, রেগুলেটর ও পাম্প চালু ও বন্ধ করার ব্যবস্থা করা দরকার।
১১. রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের মাধ্যমে বাড়ির ছাদের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও তা মাটির নিচে প্রবাহ করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ১২. প্লাস্টিক ব্যাগ ও সিঙ্গেল ব্যবহারের প্লাস্টিক অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে নিষিদ্ধ করতে হবে।