ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি:
স্বামী হারানো ষাটোর্ধ্ব রাশেদার থাকার একমাত্র ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়ে। এখন খোলা আকাশের নিচে বসে শুধুই বিলাপ করছেন তিনি। কোথায় থাকবেন, কীভাবে চলবেন- সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাকে।
রাশেদার মতো এমন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন আরও অনেকে। সোমবার ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়। এতে অন্তত ২০০ পরিবার তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে। তারা সবাই এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ভোররাত ৩টা থেকে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। সকাল পর্যন্ত চলা ওই ঝড়ে ভলাকুট ইউনিয়নের ভলাকুট, দুর্গাপুর, কঠুই, খাগালিয়া ও বালিখোলাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। পাশাপাশি ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়, মসজিদ ও মাদরাসাও লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
এছাড়া ঝড়ে ভেঙে পড়ে অসংখ্য গাছপালা ও কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি। অনেকের ঘরেই খাবারের কিছু নেই। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ভলাকুট গ্রামের বাসিন্দা রেশম বেগম জানান, মাঝরাতে হঠাৎ দেখেন ঘরের চালা উড়ে যাচ্ছে। গোয়ালের গরু-বাছুরগুলোও উড়িয়ে নিচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়! সবকিছু হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর অবস্থায় আছেন তারা। দুপুর পর্যন্ত কোনো খাবার জোটেনি। কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেননি।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নারী মাহমুদা বেগম জানান, ঝড় তাদের ছোট্ট টিনের ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বিধ্বস্ত ঘরের ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না। কারো কাছ থেকে কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে জানান তিনি।
এদিকে, ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং নাসিরনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান শাওন ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে আজকের মধ্যে সরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার। আর ঝড়ে জমির ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে- সেটি নিরূপণের জন্য কয়েকদিন সময় লাগবে। এরপর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে। সেখান থেকে ক্ষতিপূরণ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।