নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেকারি, ফাস্ট ফুড খাদ্য সামগ্রী বিক্রির জন্য রাজধানী জুড়েই ‘টেস্টি ট্রিট’র বেশকিছু শাখা রয়েছে। এসব শাখায় কেক, পেস্ট্রি কুকিজ, বিস্কুট, ডেজার্ট, স্পাইসি, হট ডগ, পিৎজা, রোল, বার্গার, মিষ্টান্নসহ বিভিন্ন বেকারি ও ফাস্ট ফুড পণ্য বিক্রি করছে। রাজধানীর বনানীতে ‘টেস্টি ট্রিট’র শাখায় মঙ্গলবার অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ঢাকা জেলা)। অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল। তার সঙ্গে ছিলেন- ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ফাহমিনা আক্তার, সহকারী পরিচালক রোজিনা সুলতানা।
অভিযানের শুরুতেই সহকারি পরিচালক ফাহমিনা আক্তার ‘টেস্টি ট্রিট’র খাবারের মান, স্বাস্থসম্মত পরিবেশ ঠিক আছে কি না যাচাই করেন। সঙ্গে খাবারের মেয়াদ ঠিক আছে কি না তাও দেখে নেন। এছাড়াও ফ্রিজের মধ্যে রাখা খাবারের অবস্থা সম্পর্কেও ধারণা নেন। হঠাৎ করেই ক্রেতাদের জন্য সাজিয়ে রাখা শোকেজের খাবারের দিকে নজর দিয়ে অবাক হয়ে যান ফাহমিনা আক্তার। খাবারের উপর দিয়ে ঘুরছে তেলাপোকা। একটি দুটি নয়, বড় তেলাপোকার সঙ্গে ছোট ছোট তেলাপোকাগুলোও স্বাধীনভাবে ঘুরছে খাবারের চারপাশ দিয়ে। এই দৃশ্য দেখে সব খাবার বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেন ফাহমিদা আক্তার।
পরে এই অভিযানে যুক্ত হোন সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং রোজিনা সুলতানা। তারাও এমন দৃশ্য দেখে ‘টেস্টি ট্রিট’র আউটলেটে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক সব খাবার ফেলে দিতে বলেন। আউটলেটের কর্মচারীরা খাবার ফেলতে গড়িমসি করছিল। ঠিক সে সময় আব্দুল জব্বার মণ্ডল নিজ হাতে শোকেজ থেকে বের করে সব খাবার ফেলতে শুরু করেন। পরে শোকেজা রাখা হট ডগ, পিৎজা, রোল, বার্গারসহ আরও খাবার নষ্ট করা হয় এবং সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়।
টেস্টি ট্রিট’র ফ্রিজেও মেয়াদ উত্তীর্ণ বাসী খাবার পাওয়া যায়। পরে অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষণিক সেই টাকা আদায় করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় বলা রয়েছে:
মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এর আগে ওয়েলবিং ফার্মেসীর বনানী শাখাতেও অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ এবং মেয়াদ আছে এমন ওষুধ এক সঙ্গে ব্যাগে বেঁধে ফ্রিজের মধ্যে রাখা, বিদেশী হ্যান্ড গ্লোভস, মাস্ক, ওক্সিমিটারে আমদানিকারকদের সিল বা দাম উল্লেখ না থাকার অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ফার্মেসীর কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই টাকা নগদ পরিশোধ করে নিষ্কৃতি পেলেও মেয়াদ উত্তীর্ণ সকল ওষুধ জব্দ করা হয়।
পরে ভ্যালু প্লাস নামের এক সপে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের এই টিম। সেখানে বিদেশ থেকে আমদানী করা পণ্যের গায়ে আমদানীকারকের সিলসহ মূল্য না থাকায় ৩৭ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নগদে সেই টাকা আদায় করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৭ ধারায় বলা রয়েছে:
পণ্যের মোড়ক, ইত্যাদি ব্যবহার না করা: কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল এবং ফাহমিনা আক্তার বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান অব্যহত থাকবে। স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এমন খাবার কোনভাবেই বিক্রি করা যাবে না। খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রাখতে হবে। আজ ওয়েলবিং ফার্মেসীকে ২০ হাজার টাকা, টেস্টি ট্রিট কে ১৫ হাজার টাকা এবং ভ্যালু প্লাস নামের একটি সপকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তীতে একই ভুল করলে এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় শাস্তির আওতায় আনা হবে।
আরইউ