সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকার চারপাশে নদ-নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ ভেঙ্গে নৌ-যান চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হবে।
রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর আওতাভুক্ত এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন রেগুলেটর/আউটলেট স্ট্রাকচারসমূহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিকট হস্তান্তর উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “ঢাকার চারপাশে নদ-নদীর উপর যে সেতুগুলো রয়েছে সেগুলো নৌ-যান চলাচলের উপযোগী নয়। ইতোমধ্যে সেসব সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলো ভেঙ্গে নৌ-যান চলাচল উপযোগী করে নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নৌ-রুট চালু করতে পারলে ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক অনেকটাই কমে আসবে।”
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জলাবদ্ধতা অনেক কম হয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা ওয়াসার নিকট থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে খাল হস্তান্তরের পর সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খনন-পুনঃখনন ও সংস্কার করা হচ্ছে। অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া অনেক জায়গা ও খাল উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জলাবদ্ধতা অনেক কম হয়েছে। আমরা দেখেছি ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যেতো। আজ কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই।”
নগরীর বাসযোগ্যতার সূচকে উন্নতি করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ করে চলেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা চার ধাপ এগিয়েছে। আমরা সিরিয়া, করাচির নিচে ছিলাম। ত্রিপোলিরও নিচে ছিলাম। ২০২১ সালে এই সূচক যখন প্রকাশিত হলো তখন আমরা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছি। যদিওবা আগাগোড়া ঢাকা শহর দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থানে ছিল।
তিনি বলেন, নগর বাসযোগ্যতার সূচকে উন্নতি করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টাট শেখ তাপস বলেন, বাসযোগ্যতার সামষ্টিক সূচকে ২০২১ সালে ঢাকা শহরের অর্জিত পয়েন্ট ছিল ৩৩.৫ নম্বর। এবছর আমরা ৩৯.২ নম্বর পেয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা চার ধাপ উন্নতি করেছিি। আমরা আগে ছিলাম সর্বনিম্ন থেকে তিন নম্বরে, এখন আমরা সাত নম্বরে উন্নীত হয়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে হস্তান্তরিত হতে যাওয়া অচল স্লুইস গেটগুলো সচল করার আশাবাদ ব্যক্ত করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “ওয়াসা থেকে আমরা যখন খালগুলো পেয়েছি তখনই আমরা এই স্লুইস গেটগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য বলেছিলাম। আজকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। আমরা এরই মাঝে এই স্লুইচ গেটগুলো মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আজকে হস্তান্তরের সাথে সাথেই এগুলো যথারীতি মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ আমরা আগামীকাল থেকেই শুরু করব। প্রত্যেকটা স্লুইস গেট অচল রয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেছেন যে, এগুলো পুরাতন নিয়মে করা। কিন্তু আমরা সেগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের যে কার্যক্রম নিয়েছি, ইনশাআল্লাহ আমরা সেগুলো কার্যকর করতে পারব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, “ঢাকায় বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। আগে বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নদীতে চলে যেত কিন্তু এখন এসব খাল ও নদী প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এমতবস্থায় সিটি করপোরেশন রাজধানীর খালগুলো সংস্কার ও সৌন্দর্যবধর্নে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে, তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। সিটি কপোরেশনের কার্যকলাপ আমাদেরকে আমার আলো দেখাচ্ছে।”
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বর্তমানে দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলছে। ঢাকা সিটির দুই মেয়র সমন্নয়ের মাধ্যমে ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমি আশাবাদী যে, খুব শীঘ্রই ঢাকা একটি বাসযোগ্য ও আধুনিক শহরে রূপান্তরিত হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “ওয়াসা থেকে খালগুলো সিটি করপোরেশনে নিকট হস্তান্তরের ফলে আমরা নগরবাসীকে এর সুফল দিতে পেরেছি। খাল উদ্ধার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে খাল খনন ও বর্জ্য অপসারণ করে চলেছি। এর ফলে ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হয়েছে। আমরা জনগণের ভোটে দায়িত্ব নিয়ে এসেছি, আমরা বসে নেই। নগরবাসীর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে পয়ঃবর্জ্যের লাইন খালে পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যানজট নিরসনে খালগুলোকে রক্ষা করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা করে আমাদেরকে ন্যাচার-বেজড সলিউশন করতে হবে।”
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, “আজকের এই হস্তান্তরের মাধ্যমে আমি শুধু এটুকুই বলবো–এটা সঠিক হাতেই পড়েছে। সিটি করপোরেশনের হাতে থাকলেই এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা হবে বলে আমি মনে করি। এই ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে যে কোনও কাজেই আমরা আপনাদের সাথে আছি।”
বক্তব্য পর্ব শেষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও হস্তান্তর করা হয়। সমঝোতা স্মারকে দক্ষিণ সিটির পক্ষে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে সংস্থার মহাপরিচালক প্রকৌশলী ফজলুর রশিদ স্বাক্ষর করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।