ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
পরিকল্পিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে অপেক্ষায় থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ‘ড্যাপ’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ড্যাপ বাস্তবায়নের পর ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগে করে সেগুলোতে বেশকিছু পার্ক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজউকের উদ্যোগে প্রণীত নতুন ড্যাপে থাকবে— ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়নস্বত্ব, প্রতিস্থাপন পন্থা, ভূমি পুনঃউন্নয়ন, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, উন্নতিসাধন ফি, স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং। ওয়ার্ডভিত্তিক জনঘনত্বের বিষয়ে দিকনির্দেশনাও থাকবে ড্যাপে। এছাড়া সড়ক, উন্মুক্ত স্থান এবং পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্যুয়ারেজসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সরবরাহের সামর্থ্য বিবেচনায় নেওয়া হবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, নতুন ড্যাপে ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হচ্ছে। এ অঞ্চলগুলোতে বেশকিছু পার্ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ড্যাপে ছয়টি আঞ্চলিক পার্ক, ১০টি ছোট পার্ক-ইকোপার্ক ও ৪৯টি জল কেন্দ্রিক পার্ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ঢাকার চারপাশের ৫৬৬ কিলোমিটার নদীপথ সচল করা এবং এক হাজার ২৩৩ কিলোমিটার সড়ককে হাঁটার উপযোগী করা। এ পরিকল্পনায় শহরের বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে স্কুলভিত্তিক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে রিং রোড, বাস রুট রেশনালাইজেশন, মেট্রোরেল চালু ও খাল ব্যবহার উপযোগী করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগকে ড্যাপে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সড়ক, জল ও রেলপথকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও সুপারিশ করা হয়েছে এ পরিকল্পনায়।
ড্যাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মোট ৪৬৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। পরে জরিপ করে প্রতিটি ব্লকের জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা এবং সেখানে উন্নয়নের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবাসিক ভবনের সার্বিক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় দুই হাজার ১৯৮ কিলোমিটার জলাধার সিএস রেকর্ড অনুযায়ী উদ্ধার করে সচলের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব এলাকাকে বিনোদন স্পটে পরিণত করারও সুযোগ সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ড্যাপে ভূমি ব্যবহার প্রস্তাবনায় ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৬০ শতাংশ এলাকাকে নগর ধরা হয়েছে। এতে আবাসিক এলাকা ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান) ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকা শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (শিল্প প্রধান) ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা ৪ দশমিক ১ শতাংশ, ভারী শিল্প এলাকা ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (বিদ্যমান) ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (প্রস্তাবিত) ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, কৃষি এলাকা ২৯ দশমিক ২২ শতাংশ, জলাশয় ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, বনাঞ্চল ১ দশমিক ৪১ শতাংশ, উন্মুক্ত স্থান ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার কেন্দ্রে জনসংখ্যার চাপ কমাতে বিভিন্ন এলাকায় সুষম উন্নয়ন এবং মেট্রোপলিটন এলাকাকে বাসযোগ্য গড়ে তুলতে বিদ্যমান ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামোর ধারণক্ষমতা, বিদ্যমান নাগরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনায় এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব জোনিং প্রণয়ন করা হয়েছে।
এর আগে ড্যাপে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরীর অবকাঠামোর পাশাপাশি সবুজ ও জলাশয় করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরিবেশের ভারসাম্যের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত স্থান হিসেবে এবং সবুজায়নের জন্য পার্ক ও উদ্যান নির্মাণের পরামর্শ দেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলেন, বড় স্কেলে পার্ক বা উদ্যান নির্মাণ এবং ছোট ছোট ব্লকের পার্ক নির্মাণ করতে হবে।
এরই প্রেক্ষিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ড্যাপে পুরো ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগে করেছে, এ অঞ্চলগুলোতে পার্ক নির্মাণ করা হবে। ড্যাপ সংশ্লিষ্ট রাজউকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজধানীতে কিছু পার্ক-উদ্যান আছে কিন্তু সেগুলো প্রধান শহরের মধ্যে কিন্তু শহরের পরিধি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলে গেছে। সেই হিসাব করলে চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী পার্ক বা সবুজায়ন নেই। যে কারণে ড্যাপে পুরো ঢাকাকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেখানে ছয়টি আঞ্চলিক পার্ক, ১০টি ছোট পার্ক-ইকোপার্ক ও ৪৯টি জলকেন্দ্রিক পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।