ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
করোনার আরেক ঢেউ চলছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃত্যু বাড়ছে। তবু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ, যাদের বয়স ২৫-৩৪ বছরের মধ্যে। আর যারা মারা যাচ্ছেন তারা বেশিরভাগই ষাটোর্ধ্ব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জানুয়ারি একদিনে শনাক্ত ছিল ১৬ হাজার ৩৩ জন। তাদের মধ্যে ২১-৩৫ বছর বয়সী ছিল ৪ হাজার ২৭ জন, ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৮৬ জন। এরপরই ছিল ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের অবস্থান, যা সংখ্যায় ১ হাজার ৯৬৯। অর্থাৎ, ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মোট ৮ হাজার ৯৮২ জন।
করোনায় গত জানুয়ারিতে মারা গেছেন ৩২২ জন। এছাড়া গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪০ জন। তার আগের সপ্তাহে তা ছিল ৭৯ জন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মৃতদের মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী ছিল ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ছিল ২০ শতাংশ। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ছিলেন ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ছিলেন ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
সংক্রমণের হারের দিক দিয়ে ঢাকা শহর এবং ঢাকা বিভাগ আছে প্রথমেই। ৩১ জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরে সংক্রমণের হার ২৮ শতাংশ এবং সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারির হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরে সংক্রমণের হার ২৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সংক্রমণের দিক দিয়ে ঢাকার পর আছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন উপধরন আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে। এ কারণে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ওমিক্রনের নতুন যে ভ্যারিয়েন্টটি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছে, তারও একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের ৫৭টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণা উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই সাব-ভ্যারিয়েন্টটি কিন্তু আগের তুলনায় বেশি সংক্রামক হতে পারে। বেশি সংক্রামক হলে ক্ষতি করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কাজেই আমাদের আত্মতুষ্টির কোনও সুযোগ নেই। রোগীর সংখ্যা কোনোভাবেই যাতে না বাড়ে সে জন্য আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সংখ্যার বিচারে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এবং রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকায় ষাটোর্ধ্বদের বেশি থাকার কারণ, তারা আগে থেকেই অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন। অন্যান্য অসুখে ভোগার কারণে তাদের টিকে থাকাটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, শুধু বললেই হবে না যে মাস্ক পরতে হবে। সেটা পরতে বাধ্য করতে হবে। লোকজনকে বলবে মাস্ক পরার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তাদের সম্পৃক্ততার কথা তো কেউ বলছে না। এটা তদারকি করবে কে সেটি বলা হয়নি। বাস্তবায়ন তো একার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না। অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার দায়িত্ব আছে। তাদের মধ্যে সমন্বয় দরকার। লকডাউন দিয়ে যে লাভ হয় না তা আমরা আগেই দেখেছি। সুতরাং মাস্ক পরার ওপর জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালন না করলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।