তারা পথের ধারেই পালন করে ঈদ

ঈদের আনন্দে সবাই মেতে উঠে। ছুটে যায় আপনজনের কাছে। ঈদের দিনে সবাই স্বজনের কাছাকাছি থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে সেই সুখ সবার কপালে হয়তো জুটে না। যাদের আপনজন বলতে পৃথিবীতে কেউ তারা হইত কোন রাস্তার ধারে বসেই পালন করে ঈদ।

দৈনিক ইত্তেফাক থেকে জানা যায় এমনি একজনের কথা। নাম তার আঞ্জুরা খাতুন । বয়স তার ৬০ বছর ছুঁই ছুঁই। ৩০ বছর আগে স্বামী মারা গেলে একাই বগুড়া থেকে ঢাকা চলে আসেন। ঢাকাই এসে প্রথমে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করলেও বয়সের ভারে এক সময় কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়। পরে অসহায় হয়ে পথে পথে মানুষের কাছে সাহায্যর জন্য হাত পাততে হয়। তখন থেকেই একাকীত্ব জীবন। স্বামী মৃত্যুর পর সন্তানাদি না থাকায় গেল ১৮ বছর ধরে পথেই ঈদ করছে এ বৃদ্ধা। রাজধানীর চন্দ্রীমা উদ্যানের সড়কের পাশে বসে থাকা এ নারী এমনই জীবনের দুঃখের গল্প শুনিয়েছে ইত্তেফাক অনলাইনকে।

রাজধানীর সংসদ ভবনের চারপাশ এলাকায় কখনো খামার বাড়ি মোড়, ফার্মগেট অথবা চন্দ্রিমা উদ্যান এসব জায়গায় প্রতিদিন দেখা মিলবে এ বৃদ্ধার। রোদ, বৃষ্টি কিংবা শীত সবকিছুতে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি।

আঞ্জুরা খাতুন বলেন, আমার কোন ছেলে-মেয়ে নেই। স্বামী মারা যান প্রায় ৩০ বছর আগে। কাছের কোন আত্মীয়স্বজন নেই। বেঁচে থাকার জন্য কাজের খোঁজে ঢাকায় আসি। কিছুদিন মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারলে অসুস্থ হলে কাজ করারও সামর্থ্য হারিয়ে ফেলি। তখন থেকে বাইরে সাহায্যের জন্য হাত পাতি। তখন থেকে পথেই আমার জীবন। গত ১৮ বছর ধরে পথেই ঈদ করছি।

এ বৃদ্ধা জানান, রাত হলে মনিপুরী পাড়ার রিক্সার গ্যারেজের পাশেই একটি খোলা জায়গায় থাকেন তিনি। সকাল ৭টার মধ্যে আবার বের হয়ে যান। আশপাশের রাস্তায় যেখানে সুযোগ সুযোগ পেলে বসেন। দিনশেষে যা আসে তা দিয়েই চলেন তিনি। এখন অবস্থা ভালো নেই। ঈদের কারণে শহরে মানুষ নেই। বৃদ্ধা বলেন, কয়েক বছর ধরে শরীরও ভালো যাচ্ছে না। পায়ে ব্যথা। যখন ব্যথা উঠে তখন আরও সহ্য করা যায় না। আমাকে দেখার মতো কেউ নেই। ব্যথা নিয়ে রাস্তায় রাতদিন পড়ে থাকি। মাঝেমধ্যে ব্যথার ট্যাবলেট খাই।

তিনি আরও বলেন, কোথায় যাবো এ বয়সে। মানুষের কাছ থেকে যে সাহায্য পাই সেগুলো দিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে কোনরকম থাকি। এখন সেটাও কমে গেছে। গত দুই ঈদে ধরে টাকা পান না। দেশে কি যে হলো! আপসোস করেই বললেন আঞ্জুরা খাতুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *