দশ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ ৯৬ হাজার কোটি টাকা

গত দশ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্যাপাসিটি চার্জের পেছনেই সরকার খরচ করেছে ৯৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ১০০ টাকার ৪২ টাকায় ব্যয় হচ্ছে ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জের পেছনে। যার অধিকাংশ নিচ্ছে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো। এজন্য কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে এক ইউনিটের জন্য পিডিবিকে গুণতে হচ্ছে প্রায় হাজার টাকা।

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে তিন বছর আগে নির্মিত হয়েছে প্যারামাউন্ট বিট্র্যাকের ২শ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখান থেকে প্রতি ইউনিট ১৯ টাকায় বিদ্যুৎ কেনার কথা ছিল পিডিবির। অথচ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি ইউনিটের জন্য কেবল ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হয়েছে ৯৫৮ টাকা। যার ফলে দাম গিয়ে ঠেকেছে ৯৬৭ টাকায়। আগের বছরও প্রতি ইউনিট খরচ হয় ৮১ টাকা। তখনও সবচেয়ে দামি ছিল এখানকার বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, ” ৯০০ টাকা কাস্টিং পড়ে এর মানে সারা বছর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাহলে যে কোম্পানিকে দিয়ে সারা বছর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাকে সেই কাজে রেখে রেখে কেনো ক্যাপাসিটি কস্ট দেওয়া হচ্ছে”।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “আমার ডিজেল প্ল্যান্টগুলো আমি হাতে রেখেছি, প্রয়োজনে চালু করা হবে। কিন্তু এখন পাওয়ার প্ল্যান্ট যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে ক্যাপাসিটি বাড়ানোর প্রয়োজনে পাওয়ার দেওয়া হবে কোথা থেকে”।

আবার এদিকে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এপিআর এনার্জি চড়া দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরেক বড় নজির। গত অর্থবছরে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে প্রতি ইউনিটের জন্য খরচ করতে হয় ৫১৮ টাকা। অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জের খেসারত দিতে গিয়ে এমন অসংখ্য কেন্দ্র থেকে প্রতি বছরই বহুগুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে পিডিবিকে।

শতাংশের হিসাবে সর্বশেষ অর্থবছর এই হার ছিল ৫৬ শতাংশ। আর গত দশ এই হার ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ।

প্ল্যানিং বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, “সরকারের এই লসকে আমি লস বলছিনা কারণ যেকোনো প্ল্যানিং ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিন্তা করে করা হয়। একটা পাওয়ার স্টেশন তো আজকে চাইলে কালকে পাওয়া যাবে না। সে হিসেবে প্ল্যানিং এর দিক থেকে কোন ভুল নেই”।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, “লাগামহীনভাবে, বেপোরোয়াভাবে এগুলোকে উৎপাদন আইনে দেখানো হচ্ছে। তাদেরকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেয়ার জন্য এগুলোর মেক্সিমাম উৎপাদন ক্ষমতা আনইউসড থাকছে”।

এদিকে ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে বরাবরই শীর্ষে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো। বিশেষ করে দ্বৈত, ডিজেল এবং ফার্নেস তেল চালিত প্রকল্প। বিশ্লেষণ বলছে, শেষ পাঁচ বছরে যে পরিমাণ ভাড়া গুণতে হয়েছে সরকারকে তার ১৮ শতাংশই নিয়েছে শীর্ষ ৭ কেন্দ্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামিটের একাধিক প্রকল্প এপিআর, প্যারামাউন্ট, দেশ, অ্যাক্রন, ইউনাইটেড ইত্যাদি। আর এর কারন হিসেবে অব্যবস্থাপনার কেই দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *