দিনাজপুর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেশের সবচেয়ে উঁচু জেলা। দিনাজপুরের সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন এখানে দেখা যাচ্ছে মরুকরণের নানা লক্ষণ।নদীতে জেগেছে চর, পানির স্তর নিচে নামছে। এছাড়া মরুকরণের ইঙ্গিত বহনকারী উদ্ভিদ সূর্য শিশিরের দেখাও মিলেছে। ফলে শস্য শ্যামল দিনাজপুর জেলাটি হয়তো একদিন হারিয়ে যেতে পারে মরুভূমির ধূসর বালির গহ্বরে।
মরুকরণের প্রধান দুটি বিষয়ের একটি বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মাটি অনুর্বর, নদী-নালা, খাল-বিল শুকানো এবং বৃষ্টি কমে যাওয়া। দ্বিতীয় মাটির অম্লতা বৃদ্ধি। বিগত কয়েক দশক ধরে এ দুটি বিষয় খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে দিনাজপুরে, জানান বিশেষজ্ঞরা।
জেলার পাঁচ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোতে ২৭টি চর জেগেছে, যা নদী-নালা, খাল-বিল শুকানোর ইঙ্গিত বহন করছে। এসব চর ২৫টি ব্লকে ভাগ করে চাষের আওতায় এনেছে জেলা কৃষি বিভাগ। যার মোট আয়তন ৯০৬ হেক্টর। এছাড়া অধিক ফসল ফলাতে জমিতে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উত্সাহিতকরণে ব্যাপক প্রচারণা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নদীতে পানিপ্রবাহে যথাযথ উদ্যোগ, খাল-বিল ও জলাভূমিসমূহ সংরক্ষণে গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রধান অফিস খামারবাড়ি থেকে দিনাজপুর জেলার ওপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল।
কাহারোলের তেঁতুলিয়া (তুলাই) নদীতে কান্তনগর, রামচন্দ্রপুর, সুন্দরপুর, ঈসানপুর, উচিৎপুর ওবলেয়া চর। ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদীতে কুলানন্দপুর চরের কথা বলা হয়েছে।চিরিরবন্দর উপজেলায় কাঁকড়া নদীতে মরানদী চর, পূর্বসাইতারা চর রয়েছে। বীরগঞ্জের ঢেপা ও পূর্ণভবা নদীতে রয়েছে নিজপাড়া, ধুলাউড়ি, ভোগডমা, বর্ষা, বিজয়পুর, ভোলানাথপুর, মিটিয়াকুড়া ও ভগিরপাড়া চর। খানসামার ইছামতি নদীতে জেগেছে গোবিন্দপুর, বাসুলি, শুশুলী, ডাঙ্গাপাড়া, বেলপুকুর, জোয়ার, কায়েমপুর, শুড়িগাও, আগ্রা ও কাচিনিয়া চর।
আট উপজেলায় কোনো চরের কথা উল্লেখ না থাকলেও বাস্তবে সেগুলোতেই অনেক চর রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখিত ছাড়াও বাদ পড়েছে অনেকগুলো চরের নাম।
২০২০ সালের জুনে দিনাজপুরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪০০ মিলি। চলতি এবারে ১৭ জুন হয়েছে ৯০ মি লি। জুনের বাকি কয়েক দিনে ২০০ মিলি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় ১১০ মি লি বৃষ্টিপাত কম হবে, জানান জেলা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র সহকারী তোফাজ্জুর রহমান।
কৃষিবিদ মো. মামুন আল আহসান চৌধুরী জানান, মাটির পুষ্টিগুণ উর্বরতা ঠিক রাখতে যে ১৬টি খাদ্য উপাদান প্রয়োজন তার ৯টির ঘাটতি রয়েছে দিনাজপুরের মাটিতে। ফলে মাটিতে অম্লতা বেড়েছে। মাটিতে অম্ল বেড়ে যাওয়া মরুকরণের লক্ষণ। সেদিক থেকে দিনাজপুর মরকরণের দিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছে।
দিনাজপুরের মৃত্তিকায় মরুজ উদ্ভিদসমূহের জন্ম এবং বিকাশ মরুকরণের প্রভাব আঁচ করা যাচ্ছে। একদিকে সীমান্তবর্তী নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ যথেষ্ট না থাকা এবং ভূগর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহার মরুকরণতার প্রভাবকে ত্বরান্বিত করছে। ক্রোটন, দুধিয়া, দুধস্বর, সূর্যশিশিরসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ তারই সাক্ষর বহন করছে। দিনাজপুরের মাঠে ঘাটে ক্রোটন উদ্ভিদের অধিক জন্মানোর হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিষয়টি স্পষ্ট করছে বলেন, গবেষক ও উদ্ভিদবিদ বিশেষজ্ঞ মো. মোসাদ্দেক হোসেন।