ঢাকা, ৯ জুলাই মঙ্গলবারঃ গত ২৫ জুন ফুড সেইফটি এনালাইসিস মূখ্য গবেষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের গবেষণায় প্রাপ্ত, পাঁচ কোম্পানির সাত ধরনের পাস্তুরিত দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং তিন ধরনের দুধে ডিটারজেন্টের উপস্থিতির তথ্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। এবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক আ.ব.ম. ফারুক গবেষণা প্রটোকল না মানায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
আজ, রাজধানীর খামার বাড়িতে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর মিলনায়তনে জাতীয় ডেইরি উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত, ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন : দেশীয় দুগ্ধশিল্প রক্ষা ও বিকাশে করণীয়’ শিরোনামে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছিউদ্দিন। এসময় তিনি বলেন, ‘ পিআর রিভিউস জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই ওই গবেষক তার তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কিন্তু তার গবেষণার স্যাম্পল সঠিক ছিল না। গবেষণায় ভুল ছিল। সাতদিনের সময় দেয়া হয়েছে, সন্তোষজনক কোন জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
এসময় তিনি আরও বলেন,’প্রাণ, মিল্কভিটা ও আড়ংয়ের দুধসহ অন্যান্য কোম্পানির যেসব দুধ বাজারে রয়েছে সেগুলো নিশ্চিন্তে খাবেন। এসব দুধে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই!দেশীয় ডেইরি শিল্পের অব্যাহত গতি থামিয়ে দেওয়ার জন্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। একজন গবেষক দুগ্ধ শিল্প নিয়ে একটা গবেষণা করে ছেড়ে দিলেন মিডিয়ায়। ওনার কি এজেন্ডা আছে এর পেছনে, উনি কি এ ধরনের কাজ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত’?
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক নূরুল ইসলাম , প্রাণ ডেইরির পক্ষে ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী ও খামারিদের প্রতিনিধি ইমরান হোসেন
উল্লেখ্য, আলোচিত এই গবেষণায় দেখা গেছে মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো‘র বাজার থেকে সংগৃহীত নমুনায় জাতীয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, বিএসটিআই কর্তৃক নির্ধারিত মান অনুযায়ী ফ্যাট ইন মিল্ক ছিল না। এছাড়া দুধে সলিড নট ফ্যাট থাকতে হবে ৮.২৫ শতাংশের বেশি। নমুনা বিশ্লেষণে যা সবগুলোতেই কম ছিল। টোটাল ব্যাকটেরিয়া কাউন্টও ছিল পাস্তুরিত দুধের সবগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।কলিফর্ম কাউন্ট পাস্তুরিত দুধের দু’টি নমুনাতে ছিল অনেক বেশি। আর স্টেফাইলোকক্কাস স্পেসিজ শূন্য থাকার কথা থাকলেও পাস্তুরিত দুধের পাঁচটিতে এর জীবাণুর উপস্থিতিতো ছিলই, এমনকি এর পরিমাণও ছিল অনেক বেশি। অর্থাৎ, বিএসটিআই এর নির্ধারিত মান অনুসারেও দুধের সবগুলোই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হয়নি!
গবেষণা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জানিয়েছেন,’ বাজার থেকে মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে। আমরা যে ফলাফল দিয়েছি, তা নমুনার ফলাফল। তার মানে এই নয় যে ওই সব কোম্পানির সব পণ্যই এ রকম। তবে এভাবে যেখানে সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হলে আমরা কিন্তু মরে যাব। অ্যান্টিবায়োটিক যে গরুকে খাওয়ানো হলো, ওই গরুর দুধ ও মাংস আমরা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষকে বাঁচাতে এখনই গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে।