নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গত দু মাসে ৮৪৬ জন নিহত হয়েছে। পাশাপশি একই সময়ে আহত হয়েছেন এবং ১০৫৭ জন। নিহতদের মধ্যে ১২১ জন নারী ও ৯২ জন শিশু। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে সবচেয়ে বেশি।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাসে ৩০৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৪৮ জন। এছাড়া দুর্ঘটনায় ১৯৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯১ জন।
এছাড়া এই সময়ে ১৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত এবং নয় জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। আর ৩২টি রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে ৩৪ জনের।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ১৭৮টি দুর্ঘটনায় এ বিভাগে নিহত হয়েছে ২০১ জন। আর সবচেয়ে কম রংপুর বিভাগে। এখানে ৪৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫৫ জন। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩৬২ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩৯ জন নিহত হয়েছিল। অক্টোবর মাসে ৩৪৬ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪০৭ জন। এই হিসেবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে দুর্ঘটনা কমেছে ৪.৪১ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ৭.২৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসে ১৬৩ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৮১ জন নিহত হয়েছিল। অক্টোবর মাসে ১৪৪ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৬৭ জন। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি সামান্য কমলেও এটি কোনো টেকসই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৬৯২ জন, অর্থাৎ ৮১.৭৯ শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে এই সংগঠনটি। সেগুলো হলো— দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’র সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।