আজ ১৫ মার্চ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এ বছর এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘নিরাপদ মানসম্মত পণ্য’। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনের জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা, সচেতনতা অভিযান, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি।
এ দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, আমরা ভোক্তার অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। রাজধানীতে আমাদের মূল কর্মসূচিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিসাপেক্ষে কিছুদিন পেছানো হয়েছে। তবে সারা দেশে এদিন রয়েছে নানা ধরনের কর্মসূচি।
তিনি আরো বলেন, ভোক্তা অধিকার আরো নিশ্চিত করতে হলে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। পণ্য কিনে বা সেবা নিয়ে প্রতারিত হলেই কষ্ট করে হলেও আমাদের জানাতে হবে। অভিযোগ করলেই আমারা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এভাবে ব্যবস্থা নেয়া হতে থাকলে পণ্যের উৎপাদন, বিক্রেতা ও সেবাদাতারা সজাগ হবে। তখন প্রতারণার ঘটনাও কমে আসবে।
ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোই দিবসটির লক্ষ্য। একজন ক্রেতার মৌলিক অধিকারের উন্নতি সাধন, বাজার ব্যবস্থার অপব্যবহার দূর করা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা দিবসটির উদ্দেশ্য।
১৯৬০ সালে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী হেগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব কনজিউমার্স ইউনিয়ন। যার বর্তমান নাম হচ্ছে কনজিউমারস ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি এই দিবস পালনে বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়। বাংলাদেশে ক্যাব এর সদস্য।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি প্রথমবারের মতো ভোক্তা অধিকারকে সংজ্ঞায়িত করেন এবং ভোক্তা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ কংগ্রেসে মি. কেনেডি তাঁর বক্তৃতায় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে ১। নিরাপত্তার অধিকার, ২। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, ৩। পছন্দের অধিকার এবং ৪। অভিযোগ প্রদানের অধিকার, ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে আলোকপাত করেন যা পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়।
১৯৮৩ সালের ১৫ মার্চ বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের সোচ্চার কর্মী মালয়েশিয়ার আনোয়ার ফজল ভোক্তা সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ভোক্তাদের মৌলিক অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতার উদ্দেশ্য বৈশ্বিকভাবে কেনেডির ভাষনের দিনটিকে উদযাপনের আহ্বান জানান। এ কারণে আনোয়ার ফজল এ দিবস পালনের রূপকার হিসেবে পরিচিতি হয়েছেন।
১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে আরো বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরো আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল এ সকল অধিকারকে সনদে অন্তর্ভূক্ত করে।
দিবসটি উপলক্ষে ভোক্তাদের বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্য প্রদান না করা, খুচরা বিক্রয়মূল্য, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে খাদ্য, পণ্য বা ওষুধ কেনা, খাদ্যপণ্য কেনার জন্য ওজন বা পরিমাপ সঠিকভাবে বুঝে নেয়া, মিথ্যা ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন থেকে সতর্ক থাকা, ভেজাল ও নকল খাদ্য, পণ্য বা ওষুধ প্রস্তুতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং প্রতারিত হলে ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ করা।