নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
রাত থেকে বমি, এরপর শুরু হয় পাতলা পায়খানা। কয়েক দফায় স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করেন মায়া রানী। তবুও কাজ হয় না, উল্টো শরীর দুর্বল লাগতে শুরু করে। নড়াচড়াও করতে পারছিলেন না। অবস্থার অবনতি দেখে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়ায়) ছুটে আসেন।
বেড সংকটের কারণে ডায়রিয়া বিভাগের বাইরের একটি চেয়ারে বসে স্যালাইন নেন। আর স্যালাইনের প্যাকেট ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন তার এক স্বজন। বেড সংকটের পাশাপাশি তার শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে জানিয়ে রাজধানীর মহাখালী ডায়রিয়া (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়ায়) মা জাহানারা বেগমকে (৪৫) নিয়ে আসেন ছেলে রাশেদুল। তিনি জানান, ‘দুই দিন ধরে মায়ের বমি হচ্ছে। শরীর খুব দুর্বল। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখন স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে, ডাক্তার ওষুধ দিয়েছেন। এখন কিছুটা ভালোর দিকে।
ছয় মাসের শিশু ছামির আলীকে নিয়ে মা কুলছুম বেগম হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। ডায়রিয়া বিভাগের ১০টি শয্যার প্রত্যেকটিতে রোগী। তাই টেবিলের ওপরে ছেলেকে নিয়ে বসে ছিলেন কুলছুম।
তিনি বলেন, ‘ছেলের হাতের রগ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্যালাইন দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে ওষুধ দিয়েছে। এখন চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছেন।’
নারায়ণগঞ্জে দিন দিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। ডায়রিয়া বিভাগের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পারছেন।
ডায়রিয়া বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স পারুল বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীদের চাপে দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। স্যালাইন ও ওষুধসহ প্রথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে অধিকাংশ রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তবে খুব বেশি সিরিয়াস হলে রাজধানীর মহাখালী হাসপাতালে রেফার্ড করে দিই।’
শয্যা সীমিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ১০টি শয্যা রয়েছে। তবে এটা যথেষ্ট না। এক বেডে একাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেডের পাশে থাকা বড় টেবিলেও সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ বেড়ে গেলে বাইরে বেডের ব্যবস্থা করা হয়। কিছুদিন আগে বেড সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স জথিকর জানান, ‘এই সময়ে রোগীর খুব চাপ থাকে। গত এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বেড সংখ্যা সীমিত থাকায় একটু বেগ পোহাতে হচ্ছে। এক বেডে একাধিক রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এস কে ফরহাদ জানান, গত কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বেলা ১১টা পর্যন্ত ৮৪ জন ভর্তি আছেন। বুধবার ছিল ১৯৭ জন, মঙ্গলবার ১৬৫ ও সোমবার ১৬৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ছিলেন। গত সোমবার থেকে আজ পর্যন্ত মোট ভর্তি হন ৬১৪ জন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।’
তিনি বলেন, দিন দিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীর চাপ বেশি থাকায় দুটি বেড বাড়ানো হয়েছে। ওয়ার্ডের বাইরে দুটি বেড বসানো হয়েছে। আগে আটটা ছিল। পরে দশটা করা হয়। আরও দুইটা বাড়ানো হয়েছে। বেড সংকটের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করেছি।
ডা. ফরহাদ জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ, গোদনাইল ও চৌধুরীবাড়ি এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী এসেছে। দূষিত পানি এর জন্য দায়ী। আমাদের এখানে ওয়াসার পানি নিরাপদ নয়। এই পানি সব জায়গায় নিরাপদ নয়। তাছাড়া পানির লেয়ার এখন অনেক নিচে চলে গেছে। তাই সবাইকে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করে পান করতে হবে। অথবা ফুটিয়ে পানি পান করতে হবে।