ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: আসন্ন বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা থাকা জরুরি। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি।
চলতি অর্থবছরে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, বহির্বিশ্বের বাণিজ্য পরিস্থিতি ও যুদ্ধ অর্থনীতিকে নতুন চাপে ফেলেছে। তাই প্রথাগত বাজেট তৈরির ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাজেট প্রণয়ন করার পক্ষে মত দেন আলোচকরা।
রোববার (১৭ এপ্রিল) ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে আলোচকদের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে আসে।
পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা সংলাপে অংশ নেন। সংলাপে বিশেষ বক্তব্য দেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নয়, কর্মসংস্থান প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। চলতি অর্থবছরে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, বহির্বিশ্বের বাণিজ্য পরিস্থিতি ও যুদ্ধ অর্থনীতিকে নতুন চাপে ফেলেছে। তাই প্রথাগত বাজেট তৈরির ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা উচিত। তাই বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পূর্বেই জনসাধারণের জন্যে একটি খসড়া নীতিমালা উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত যেন জনগণ সরাসরি তাদের প্রত্যাশাগুলো ব্যক্ত করতে পারেন। অর্থনীতির চাকা সচল করতে তাই একটি সম্প্রসারণমূলক মুদ্রা নীতি প্রণয়ন অতীব জরুরি। তাছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে জনগণকে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে, সরাসরি বিভিন্ন প্রণোদনা, যেমন – অর্থনৈতিক সুরক্ষা, খাদ্য প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর এজন্যে পূর্বের সকল প্রণোদনা কর্মসূচির পরিবীক্ষণ প্রয়োজন।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পরিচালক টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, অতিমারির জন্য শিশুদের পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক বিদ্যালয়গুলো চালু থাকলেও, গ্রামাঞ্চলে বা দুর্গম জায়গাগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একই কারণে গত দুই বছরে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ দুটোই বেড়েছে। বিভিন্ন কারণে যারা ঝরে পরেছে, তাদের স্কুলে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই এই সমস্যাগুলোর নিরসনে শিশু বাজেট নতুন আঙ্গিকে প্রণয়ন করা দরকার।
সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজেবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধীদের বাজেট বলতে শুধুমাত্র সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়য়ের বাজেটকে বুঝায়। অন্যদিকে প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় মাসিক মাত্র ৭৫০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়, যা দৈনিক হিসাবে ২৫ টাকা। এটা সহজেই অনুমেয়, ভাতার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, প্রতিবছর ভাতাপ্রাপ্যদের সংখ্যা বাড়লেও ভাতার পরিমাণ বাড়ে না।
আসন্ন বাজেট থেকে ট্রান্সজেন্ডার গোষ্ঠীর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়ার সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট হয়নি। সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলছে ১০ হাজার, কেউ বলছে এক লাখ। তাদের বিষয়ে একটি জরিপ প্রয়োজন। তারপর তাদের বিষয়ে বাজেট বরাদ্দ ঠিক করা দরকার। হিজড়া সম্প্রদায়কে রাস্তায় দেখতে চাই না। তাদের পরিবারের মধ্যে দেখতে চাই। এর জন্য সরকার প্রয়োজনে পরিবারকে কীভাবে সহায়তা করা যায় সেটার দাবি রয়েছে। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
দলিত সম্প্রদায়ের পক্ষে বিপ্লব চন্দ্র ঋষি বলেন, দলিতদের কোনো নিজস্ব ভূমি নেই। তাদের খাস জমি থেকে জমি দেওয়া, আবাসনের ব্যবস্থা করা, উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদের ঋণ এবং তাদের শিক্ষার জন্য বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।
আদিবাসীর পক্ষে খোকন বলেন, করোনাকালে আদিবাসীদের অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। করোনাকালে সরকারের প্রণোদনা থেকে আদিবাসীরা বঞ্চিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়িয়ে আদিবাসীদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে। এছাড়া আদিবাসীদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নীতিমালা প্রণয়ন, বাজেটে তাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য থাকা, আদিবাসী শুমারি করার দাবি জানাচ্ছি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, লবণাক্ত পানি জমিতে প্রবেশ করে ফসল নষ্ট করছে। আমাদের দাবি মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন স্লুইসগেট রয়েছে তার সবই ভাঙা, মেরামতের ব্যবস্থা করার পর্যাপ্ত বাজেটের বরাদ্দ করা। ন্যায্যমূল্যে সার ও ধানের ন্যায্যমূল্য পাই না। আমরা সরকারের কাছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাজেটে এর ব্যবস্থাপনা দাবি করছি।
জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সুসংগঠিত করে একটি নীতিমালার মাধ্যমে হকারদের স্বীকৃতি চাই। আমরা সরকারের কোষাগারে কর-ভ্যাট দিতে চাই। আমরা অবহেলার জায়গায় থাকতে চাই না।
পরিবহন শ্রমিকদের দীর্ঘ কর্মঘণ্টার ওপর আলোকপাত করে সোশ্যালিস্ট লেবার ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বুলবুল বলেন, পেশাগত কারণে দীর্ঘসময় কাজে নিয়োজিত থাকায় পরিবহন শ্রমিকদের খুব অল্প বয়সেই কর্মক্ষমতা হারাতে হয়। তাছাড়া নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতেও তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।
এজন্য তিনি প্রস্তাব করেন যে, আসন্ন বাজেটে শ্রমিকদের জন্যে ভর্তুকি মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও, পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ঘটনা বিমার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।