সমনেই শব-ই-বরাত কে কেন্দ্র করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেমন কমেছে আবার কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছেও।
চালের দাম বর্তমানে কিছুটা কম তবে দাম বেড়েছে সবজি, মুরগী ও মাছের। এছাড়া দাম বেড়েছে দুধ চিনি এবং ভোজ্যতেলের। মসলাপাতির মধ্যে রসুনের দাম কমলেও বেড়েছে আদা ও জিরার দাম। তবে আটা, ময়দা ও পেঁয়াজের দামে কোনো পরিবর্তন আসে নি।
দেশী, পাকিস্তানী কক, লেয়ার ও ব্রয়লার। মাসখানেক আগে দেশী মুরগির কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা। কয়েক দফায় দাম বেড়ে এখন দেশী মুরগির কেজি হয়েছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। অর্থাৎ দেশী মুরগির দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০০ টাকার ওপরে। রাজধানীর বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পাকিস্তানী কক মুরগি। মাসখানেক আগে এ মুরগির দাম ছিল প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন উৎসবের মৌসুম আর এ কারণে মুরগির দাম চড়া। পিকনিক, বিয়ে-শাদিসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় মাংসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এর সবচেয়ে বড় চাপ মুরগির ওপর। আর এ কারণে দাম বাড়তি।
মুগদা বড় বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হালিম বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, শব-ই-বরাত সামনে রেখে চাহিদা বাড়ার কারণে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়ে গেছে। উৎসবে ব্রয়লার মুরগির চেয়ে পাকিস্তানী কক, লেয়ার ও দেশী মুরগির চাহিদা বেশি থাকার কারণে এসব মুরগির দাম বেশি। তবে উৎসব পার্বণ কমে এলে আবার দাম কমে যাবে বলেও তিনি জানান। তবে খামার মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া মুরগির খাবার ও অন্যান্য ওষুধ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগির উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে সরবরাহও কিছুটা কমে গেছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, এক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি সব ধরনের মুরগি। দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
শব-ই-বরাত সামনে রেখে বাজারে বেড়ে গেছে গরু ও খাসির মাংস এবং মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বকরির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। এছাড়া মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি জাত ও মানভেদে ৫৫০-১২০০ এবং প্রতিকেজি ইলিশ মাছ ৯০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে ছোলার দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিকেজি ছোলা এখন ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রোজা সামনে রেখে দাম বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া চালের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতিকেজি নাজিরশাইল ও মিনিকেট সরু চাল ৬২-৬৫, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৫২-৬০ এবং মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৭-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। শীতের সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম।
সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি) ঢাকার অধিকাংশ নিত্যপণ্যের বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার তথ্য দিয়েছে। শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত দাম কমানোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে শব-ই-বরাতের আগে বাজার পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রোজার একমাস আগে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। রোজার সময় সেই বাড়তি দামেই পণ্য বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এবার ইতোমধ্যে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট বাড়লেও অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট ভারি হয়।