করোনাভাইরাসের বিস্তার আবার বেড়ে যাওয়ার মধ্যে অর্থ লেনদেন সহজ করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে জানানো হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি-টু-পি) ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠাতে কোনো বাড়তি খরচ লাগবে না। এর মধ্যে প্রতি ধাপে লেনদেনে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার টাকা। কিন্তু বিকাশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে টাকা পাঠাতেও চার্জ নেয়া হচ্ছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ব্যক্তি হতে ব্যক্তি (পি-টু-পি) টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে মওকুফ করা হয়েছে চার্জ। তবে, এখনও কার্যকর করেনি এই ধরনের ব্যাংকিংয়ে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে জানায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পি-টু-পি ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠাতে কোনো খরচ লাগবে না। এর মধ্যে প্রতি ধাপে লেনদেনে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার টাকা।
কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে টাকা পাঠাতে তৈরি হয়েছে বিপত্তি। শফিক রহমান নামের এক বাক্তি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেয়া প্রতিষ্ঠান, বিকাশ-এর মাধ্যমে মায়ের কাছে ৩০০ টাকা পাঠাতে গিয়ে দেখতে পান ৫ টাকা চার্জ কাটা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ‘টাকা পাঠাতে চার্জ না কাটার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমে দেখলাম এখন থেকে চার্জ নেয়া হবে না। তাহলে কেন নেয়া হচ্ছে?
এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, সেন্ড মানির ক্ষেত্রে এজেন্টের বিষয় না। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে।তিনি জানান, সেন্ড মানি মানে ব্যক্তি টু ব্যক্তি টাকা পাঠানোকে বোঝানো হয়। এটা ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফ্রি করা হয়েছে।
আলমগীর রহমান নামে এক গ্রাহক তার ভাইকে ৩ হাজার টাকা পাঠানোর পর ১০ টাকা কেটে রাখা হয়েছে। চার্জ কাটা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আলমগীর।তিনি বলেন, করোনার মধ্যে চার্জ কাটার কথা না। এরপরও দেখলাম অতিরিক্ত ১০ টাকা নাই। ব্যাপারটা বুঝলাম না।
বিষয়টি বিকাশের শামসুদ্দিন হায়দার ডালিমকে অবহিত করলে তিনি বলেন, ইনডিভিজুয়্যাল অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে, ওই অ্যাকাউন্টের কী অবস্থা খোঁজ নিতে হবে।
তাহলে কী ফ্রি টাকা পাঠানোর সেবাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়নি? এবার এমন প্রশ্নের উত্তরে ডালিম বলেন, ‘আমি জানি না ঠিক অ্যাকাউন্ট ক্ষেত্রে সমস্যা করছে কি না। আমি খোঁজ নেব কেন কাটা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের রবিবার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে ব্যক্তি হতে ব্যক্তি প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা লেনদেন করতে পারবে, আগে যা ছিল ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে পি-টু-পিতে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে কোনো প্রকার চার্জ ছাড়াই। অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠাতে কোনো বাড়তি খরচ লাগবে না। তবে প্রতিবার লেনদেনে সর্বোচ্চ সীমা হবে ১০ হাজার টাকা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ২০০ থেকে ৩০০ টাকা টাকা পাঠাতে গেলেও বিকাশ ৫ টাকা করে চার্জ কাটা হচ্ছে। শুধু যে বহাল রেখেছে তাই নয়। ২৫ হাজার টাকার ওপর লেনদেনে সেন্ড মানিতে তারা চার্জ ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায় উন্নীত করেছে।
সেদিক থেকে স্বচ্ছ অবস্থানে আছে ডাক বিভাগের মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান নগদ। তাদের যাত্রার শুরু থেকেই যেকোনো নাম্বারে যেকোনো পরিমাণ অর্থ ‘পি টু পি’ সেন্ড মানি সার্ভিস ফ্রি দিয়ে আসছে।
এজেন্ট এবং সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ। তবে, এই প্রতিষ্ঠানঅর্থ প্রেরণ এবং উত্তোলনে নিচ্ছে সবচেয়ে বেশি অর্থ।
প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। আর সেন্ড মানি বা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে টাকা পাঠাতে গেলে প্রতি লেনদেনে নেয়া হয় ৫ টাকা। সব মিলিয়ে ১ হাজার টাকা উত্তোলন এবং জমার ক্ষেত্রে বিকাশের একজন গ্রাহককে খরচ করতে হয় ২২ টাকা ৫০ পয়সা।
ইউটিলিটি বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিকাশের চার্জ সবচেয়ে বেশি। এসব বিল দেয়ার ক্ষেত্রে বিকাশ সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ নিচ্ছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। আর বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের চার্জ ১ দশমিক ১ ভাগ থেকে ১ দশমিক ৫০ ভাগ পর্যন্ত।
অর্থের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটও। এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করলে প্রতি হাজারে ক্যাশ আউটে খরচ গুণতে হয় ১৭ টাকা ৫০ পয়সা।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম আরও বলেন, ‘এজেন্টের কাছে যেটা করা হয় সেটা লেনদেন। এখানে এজেন্ট অতিরিক্ত চার্জ নিলে সেটা তার ব্যাপার। এটা বৈধ লেনদেন না। এটার সঙ্গে বিকাশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
‘অনেকের নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্ট না থাকার কারণে এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এজেন্ট গ্রাহকের থেকে যদি বাড়তি টাকা নেয়, সেটা তার ব্যাপার। এটা বিকাশের হিসাবে কোনো চার্জ নেয়া হচ্ছে না। কারণ বিকাশে সেন্ড মানি ফ্রি।’