নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ৫৭ পদের বিপরীতে ১৬ জন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। প্রায় সাত বছর ধরে তালা ঝুলছে হৃদরোগ বিভাগে। এতে চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নীলফামারী সফরে এসে এখানের মানুষের দাবির মুখে উন্নত চিকিৎসার জন্য নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে হৃদরোগের দুটি ওয়ার্ড স্থাপনের নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক ১০ শয্যার ওয়ার্ডের জন্য সেখানে ডি-ফেসিলেটর মেশিন দুটি, কার্ডিয়াক মনিটর ২০টি স্থাপন করা হয়। যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। বছরের পর বছর বিভাগটি তালাবদ্ধ থাকায় যন্ত্রপাতি বিকল হতে বসেছে। রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে বিভাগটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, ওই বিভাগটি চালাতে দক্ষ জনবলসহ একেবারে আলাদা সবকিছু দরকার। ১০ শয্যার ইউনিট চালাতে একজন বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল কর্মকর্তাসহ ১০ জন চিকিৎসক ও ২০ জন নার্স প্রয়োজন। এছাড়া আইসিইউ এবং সিসিইউর জন্য প্রয়োজন আলাদা ব্যবস্থা। কিন্তু এখানে এসবের কিছুই নেই। ফলে প্রতিদিন ৩-৪ জন রোগীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়। তাদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো সাধ্য নেই আমাদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ ১৬ জন কর্মরত রয়েছেন। তবে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, ইএমও, সহকারী সার্জন ২২ জনসহ ৪১ পদ শূন্য রয়েছে।
জানা যায়, ১৬ কর্মকর্তার মধ্যে শিশু বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার একজন, মেডিসিন বিভাগে সিনিয়র কনসালট্যান্ট একজন ও অ্যানেসথেসিয়ায় জুনিয়র কনসালট্যান্ট একজন রয়েছেন। পাশাপাশি সার্জারি বিভাগে একজন চিকিৎসক, চক্ষু বিভাগে সিনিয়র কনসালট্যান্ট একজন, গাইনিতে জুনিয়র কনসালট্যান্ট একজন, নাক, গলা, কান বিভাগে সিনিয়র কনসালট্যান্ট একজন ও রেডিওলজি বিভাগে সিনিয়র কনসালট্যান্ট একজন আছেন। বাকি সাত জন অন্যান্য বিভাগে কর্মরত। ফলে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, সি-আরম, ডেন্টাল ইউনিট, মাইক্রোসকোপ, অটোএনালাইজার, ডায়াথার্মি ও অটোক্লেব মেশিনসহ ৩৯টির মধ্যে ১৮টি যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে আছে। জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব যন্ত্রপাতি। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষ। বেসরকারি হাসপাতালে এসব পরীক্ষায় মোটা অংকের টাকা গুনতে হয় রোগীদের।
হাসপাতালের নাক, গলা ও কান বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে একাই চিকিৎসা দিয়ে আসছি। প্রতিদিন ইনডোর ও আউটডোরে প্রায় ৮০ জন রোগী দেখতে হয়। কোনোদিন ইনডোরে ১৫ থেকে ২০ জন আবার আউটডোরে ৫৫ থেকে ৬০ জন রোগী দেখতে হয়। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ইনডোর এবং আউটডোরে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। চিকিৎসকরা হাসপাতালে ভর্তি রোগী দেখা শেষ করে বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। ফলে বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। চিকিৎসক স্বল্পতা একটি বড় সমস্যা। এজন্য রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
উল্লেখ্য, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পুরো কার্যক্রম শুরু হয়।