পর্যাপ্ত গবেষণা ও সরকারি প্রণোদনার অভাবে নদীগর্ভে জেগে ওঠা চরগুলো স্থায়িত্ব নিয়ে বেশিদিন টিকে থাকতে পারছে না।
মেঘনার ঢেউয়ের আঘাতে ইতোমধ্যে কেরিংচর প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। সাদ্দাম বাজার, মুজিব বাজার, জয়বাজার, হাসিনা বাজার এবং সেনাবাহিনী প্রহরী ক্যাম্পও বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া চরণঙ্গোলিয়ার জনতা বাজার এর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নদীগর্ভে চলে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব চর একসময় মূল ভূখণ্ড হাতিয়ার সীমানারই অংশ ছিল। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে মূলভূখণ্ড হাতিয়া থেকে নলচিরা, সাহেবানী, বাতানখালীসহ প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ অংশবিশেষ হারিয়ে বিলীন হয়েছে মেঘনায়। বিলীন হওয়ার মাত্র ক’বছরের মধ্যে নদীর অংশ বিশেষে জেগে উঠেছে নতুন নতুন কয়েকটি ছোট ছোট চর। যা কেরিংচর, নলের চর, নঙ্গোলিয়া চর, চর বাসার, বয়ার চর, নঙ্গোলিয়াসহ নানা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু সময়ের চাকা ঘুরতে না ঘুরতে এসব চর মেঘনার উত্তাল ভাঙনে বিলীন হতে শুরু করেছে। দুস্তরা ঠাঁই নিয়েছে সদর ও সুবর্ণচরের আশপাশের বেড়িরকূলে।
নোয়াখালী উপকূলীয় বিভাগীয় বনকর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, ভাসানচরের দক্ষিণে ও হাতিয়ার উত্তর অংশে জনতা বাজার এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলে আরো নতুন নতুন বনায়ন করতে পারলে ভাঙন কিছুটা রোধ পাবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে আশার কথা যে, জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের সিংহভাগ ভূখণ্ড সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে যে সময়ে, ঠিক তখনই জনমনে সীমাহীন আশা জাগিয়ে নোয়াখালীর উপকূলীয় মেঘনার বুকে নতুন নতুন চর জাগছে। হাতিয়ার পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠেছে নিঝুমদ্বীপ, পূর্বে স্বর্ণদ্বীপ ও ভাসানচরসহ অনেক চর। তবে ভাসানচরের দক্ষিণাংশে প্রবল ভাঙন শুরু হওয়ার কথা জানা গেছে। তবুও মেঘনা গর্ভে জেগে ওঠা এসব চর রক্ষাকর্মে উন্নতমানের সুরক্ষা পদ্ধতি ও ভূমি সুরক্ষা গবেষণা হাতে নেওয়া হলে আগামী এক দশকে হাতিয়া উপজেলার আয়তন হবে একটি বিশাল আয়তনের জেলার সমান।
এ ব্যাপারে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান জানান, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কোম্পানীগঞ্জের জন্য ৪৮৩৫ একর ভূমি ও সুবর্ণচরের জন্য ৭৭৯ একর ভূমি বন্দোবস্ত সম্পন্ন হয়েছে। এই দুই উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখানে ব্যাপক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে দুই উপজেলার জীবনযাত্রা। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, নোয়াখালীর উপকূূলীয় এলাকায় প্রতি বছর ৫০ হাজার হেক্টর নতুন ভূমি জাগছে। তবে এর মধ্যে ৩০ হাজার নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে। এরপরেও মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার যোগ হচ্ছে। এগুলোতে বনায়ন করা হচ্ছে।