ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। সড়কে যাওয়া পণ্যগুলোর গন্তব্য কম দূরত্বের দেশগুলো। প্লেন বা উড়োজাহাজে বেশি যাচ্ছে পচনশীল পণ্য। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় আকাশপথে।
বাংলাদেশের তুলনায় পার্শ্ববর্তী দেশের প্লেনভাড়া কম। এ কারণে ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানিকারকরা কম খরচে পণ্য পৌঁছাতে পারেন বিদেশে। অন্যদিকে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। ফলে চড়া দামের কারণে ক্রেতা হারাচ্ছেন তারা।
সব কিছু হিসাব করে এ দেশের রপ্তানিকারকরা কম দামে পণ্য দিতে পারেন না। এ কারণে বিদেশি ক্রেতারা ভারত-পাকিস্তানকে বেছে নিচ্ছেন। পণ্য পরিবহন ভাড়া যাত্রীবাহী প্লেনের চেয়েও তিনগুণ বেশি। ভাড়া এ দেশের রপ্তানিখাতের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের প্লেনভাড়ার চিত্র উঠে এসেছে সরকারের শাক-সবজি, ফলমূল ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তুত রোডম্যাপেও। সেখানে দেখানো হয়েছে, বর্তমানে প্লেনে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত পণ্য পাঠাতে খরচ হয় কেজিপ্রতি ৩ দশমিক ৩ থেকে ৩ দশমিক ৬ ডলার পর্যন্ত। যেখানে ভারতের কলকাতা থেকে একই গন্তব্যে সমপরিমাণ পণ্য পাঠাতে খরচ হয় ২ দশমিক ৮ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩ ডলার। পাকিস্তান থেকে রপ্তানিতে এ খরচ আরও কম, যা ২ দশমিক ৪ ডলার থেকে আড়াই ডলার পর্যন্ত।
বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনকারী প্লেনের আরেক বড় গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। সেখানেও প্লেনভাড়ায় উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কেজিপ্রতি পণ্যের প্লেনভাড়া গড়ে দেড় ডলার, যা পাকিস্তান থেকে মাত্র দশমিক ৪০ ডলার। অবশ্য একই গন্তব্যে ভারত থেকে কেজিপ্রতি পণ্যের প্লেনভাড়া ১ দশমিক ৮২ থেকে ১ দশমিক ৯১ ডলার পর্যন্ত।
পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে পণ্য পরিবহন ভাড়ার এমন অসামঞ্জস্যতা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে প্লেনে পণ্য পরিবহন ভাড়ায় একটি বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্লেনে পণ্য পরিবহনে যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তা আগের চেয়ে অনেক বেশি।
সংগঠনটির তথ্য মতে, করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে (২০১৯ সাল) ইউরোপে কেজিপ্রতি ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৩ ডলারে পণ্য পরিবহন করা যেত, যা এখন ৩ দশমিক ৬ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যে প্রতি কেজি পণ্য ১ দশমিক ১৫ ডলারে পাঠানো যেতো, যা উঠেছে গড়ে দেড় ডলারে।
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিমানের ভাড়া কমানোর একটি প্রস্তাব আমরা করেছি। বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে কিছু বাড়তি জায়গা পেয়েছি কয়েক মাস আগে। স্পেস ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানিকারক প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়গুলো আরও রপ্তানিবান্ধব ও সহজতর করতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। আশা করছি দ্রুত কৃষিপণ্য রপ্তানির বাধাগুলো কেটে যাবে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ৪০ ধরনের সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে আকাশপথে। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, সৌদি আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ইতালি ও ফ্রান্সে।
এছাড়া বাহরাইন, ওমান, মালয়েশিয়া, সুইডেন, কানাডা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশেও এসব খাদ্যপণ্য রপ্তানি হয়। সবজি ও ফলের পাশাপাশি দু-তিন ধরনের মাছও রপ্তানি হয় এসব দেশে। এছাড়া দ্রুততম সময়ে পৌঁছানোর জন্য গার্মেন্টস পণ্যও যাচ্ছে একই গন্তব্যে।
বাড়তি ভাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা। কারণ সবজির বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পণ্যগুলোর ধরন একই। তিন দেশের রপ্তানির গন্তব্যও একই। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের ভাড়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ার কারণে বিদেশি ক্রেতারা তাদের থেকেই পণ্য কিনছেন বেশি। সম্ভাবনা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।