ঢাকা, ২৬ জুন বুধবারঃ গতকাল মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রকাশিত দুই ভিন্ন সংস্থার বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে উঠে আসা সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্যে বিভ্রান্ত ভোক্তারা এখন বলছেন,’ আমরা কী খাব?‘
গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত, সাত কোম্পানির দুধে বেশি মাত্রায় ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক এমনকি ডিটারজেন্ট, ফরমালিন ও অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে!
এই সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টাখানেকের ভেতর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, জাতীয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, বিএসটিআই হাইকোর্টে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দাবী করেছে, তাঁরা বাজারে প্রচলিত ১৪ ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কোনো কিছুর অস্তিত্ব পায়নি!
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে বাজারে প্রচলিত তরল দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রীতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদানের অস্তিত্ব পেয়েছিল। গত ৮ মে সংস্থাটি আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে তরল দুধের ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৩টিতেই সীস ও আরও বেশ কিছু ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার কথা জানানো হয়। এছাড়া তাদের প্রতিবেদনে, প্যাকেটজাত ৩১টি দুধের মধ্যেও ১৮টিতেই ক্ষতিকর উপাদান এবং কিছু কিছু দুধের নমুনায় টেট্রাসাইক্লিন ও সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এরও আগে, ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনগুলো নজরে আনা হলে আদালত এ বিষয়ে রিট আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। ২০ মে হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাজারে পাওয়া যায় এমন সব ব্রান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশনা দেয় আদালত।
গতকাল পরপর দুই প্রতিষ্ঠানের পরস্পরের দাবী খারিজ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ বিষয়ে ভোক্তারা তাঁদের শঙ্কা ও ক্ষোভের প্রকাশ করেছেন আমাদের কাছে। রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা হুমায়রা চৌধুরী বুশরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন,’আমার শিশু সন্তানকে মা হয়ে নিজের হাতে বিষ খাওয়াচ্ছি! এর থেকে বড় অপারগতা আর কি হতে পারে? এই দেশে জন্মানো কি তবে পাপ? অর্থের লোভে এত নীচে নেমে গেছে সবাই! শিশুখাদ্য হিসেবে বিবেচিত দুধের ভেতরেও বিষ মেশাতে বাঁধেনা আর। বিএসটিআই কত টাকার বিনিময়ে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছে আমি জানতে চাই। এভাবে তিলতিল করে না মেরে আমাদের সবাইকে একবারে মেরে ফেলুক তারা।’ এক পর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন।
একপ্রকার মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েও মন্তব্য করতে নারাজ বিএসটিআই কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য,’ আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে, আমাদের যা বলার তা আমি আদালতেই বলছি। এর বাইরে এ বিষয় নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি বলছে না বলছে সেটা তাদের বিষয়। সেটা আমাদের মাথাব্যথা নয়। দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ফ্যাক্টরি ও বাজার থেকে। দুই পরীক্ষাতেই ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি! সুতরাং আমাদের পরীক্ষায় কোনো সমস্যা নেই। ‘
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ জানিয়েছেন,’একাধিক বাজার থেকে টাকা দিয়ে নমুনা দুধ কিনেছি। সেগুলো পরীক্ষা করেছি। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং বাজারে যা পেয়েছি, তাই পরীক্ষা করেছি। বিএসটিআইর প্যারামিটার মেনেই এসব পরীক্ষা করা হয়েছে। সুতরাং আমাদের গবেষণায় কোনো গাফিলতি নেই। কোনো ক্ষতিকর উপাদানই নেই, ঢালাওভাবে এ কথা বলার সুযোগ কি আদৌ আছে? কেননা এর আগেও সরকারের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এসব দুধে ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে। সুতরাং বিএসটিআইর এসব বিষয় পরিষ্কার করা উচিত। আমার মনে হয়, সংস্থাটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নমুনা দিতে বলেছে। তারা তাদের বেস্ট স্যাম্পলটাই জমা দিয়েছে পরীক্ষার জন্য।