‘সবজি নিয়ে আমরা মহাবিপদে আছি, ফেলেও দিতে পারছি না আবার বিক্রিও করতে পারছি। এত টাকা খরচ করে সবজি খেত করলাম এখন ঐ সবজির কোনো দামই নাই’, চোখে মুখে কষ্ট আর বেদনা নিয়ে কথা গুলো বলছিলেন কৃষ্ণ নগরের সবজি কৃষক রেনু মিয়া।
জাগো নিউজের মাধ্যমে জানা যায়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে সবজির চাষ করেছিলেন, শীতের প্রথম দিকে চড়া দামে সবজি বিক্রিও করতে পেরেছিলেন, ভেবে ছিলেন সবজি বিক্রি করে যে টাকা লাভ হবে সেই টাকা দিয়ে একমাত্র মেয়ে মাইসাকে (২০) ধুমধাম করে বিয়ে দিবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি হলো না। বাজারে সবজির দাম এতটাই কমেছে যে বাজারে প্রচুর সবজি উৎপাদিত হওয়ায় এখন পানির দামেও সবজি বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা।
ফলে নৌকা বোঝাই করে যে সবজি তারা ভোর বেলা বিক্রির জন্য সুনামগঞ্জ বাজারে নিয়ে আসেন সেই সবজি বিক্রি করতে না পেরে আবার সাথে নিয়ে যেতে হয়। শুধু রেনু মিয়া নয়, ঐ রকম হামিদ মিয়া, কেসমত আলী, জসিম উদ্দিনসহ অনেক কৃষক সবজি চাষ করে বিপাকে আছেন।
শীতরে শুরুর দিকে সুনামগঞ্জের সবজি বাজারে সবজরি দাম চড়া থাকলেও এখন এসব উৎপাদিত সবজি পানির ধরে বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা।
২৮ ফেব্রয়ারি সকালে সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের নৌকা বোঝাই করে টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, উড়ি, ডেংগা শাক, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে বসে আছেন কৃষকরা। কিন্তু বাজারে সবজির দাম কম হওয়ায় বড় বড় আরৎদারি ব্যবসায়ীরা লোকশানের ভয়ে সবজি কিনছেন না।
আড়ৎদারি ব্যবসায়ীরা জানান, সবজি কিনে কোনো লাভ নাই, বাজারে সবজির কোনো দাম নাই, কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কম টাকায় কিনলেও শ্রমিক খরচসহ আমাদের কেজি প্রতি সবজিতে টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয়।
কিন্তু ক্রেতারা ভোর সকালে বাজারে এসে কম দামে বস্তা বড়ে সবজি কিনে নিয়ে যান। ফলে আমাদের বড় অংকের টাকা লোকশান গুণতে হয় তাই আমরা তেমন একটা সবজি এখন কৃষকদের কাছ থেকে কিনতে চাচ্ছি না।
সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলকপি ৫ থেকে ৭ টাকা (পিছ), বাঁধাকপি ৪ থেকে ৫ টাকা (পিছ), লাউ ৫টাকা (পিছ) গাজর ১০ টাকা (কেজি), শিম ১০ টাকা (কেজি), টমেটো ২-৩ (কেজি), মুলা ৪ টাকা হালি, চিচিঙ্গা ১০ টাকা (কেজি), বেগুন ১৫ টাকা (কেজি) বিক্রি করা হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা আজিজুর রহমান জানান, সবজির দাম খুব বেশি কমে যাওয়ায় কৃষকেরা খেতে পড়ে কান্দে (কাঁদে) আর আমরা বিক্রেরা তারা দোকানে বসে কান্দি (কাঁদে) প্রচুর দিকে মাল আমদানি, সবজির দাম কমে যাওয়ায় সত্যি আমরা খুব কষ্টের মাঝে আছি।
ক্রেতা আলম আহমদ জানান, কিছুদিন আগে একটি লাউ কিনেছি ৪০-৪৫ টাকায়। এখন দুটি লাউ কিনলাম ১৬ টাকায়। বাজারে ‘সব সবজির দাম খুব কম।
সবজি বিক্রেতা হামিদ মিয়া জানান, এই বছর সবজির দাম যে সস্তা আর কোনো বছর এই রকম সস্তা হয়নি। আমরা নৌকা বোঝাই করে যে সবজি নিয়ে বাজারে আসি সেই সবজি আমাদের পানি ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে শুধু। তাই সবজি করতে আমাদের যে টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকাও এখন পর্যন্ত তুলতে পারিনি।
সবজি বাজারের সভাপতি মো.নুরুল মিয়া জানান, সবজি নিয়ে কৃষকরা খুব বিপাকে আছে। সবজি খেত করতে তাদের যে টাকা খরচ হয়েছে তারা সেই টাকাও যেন পর্যন্ত তুলতে পারছে না। শুধু কৃষক নয় আমরা যারা আরৎদার ব্যবসায়ীরাও বিপাকে আছি আমাদেরকেও প্রতিদিন বড় অংকের টাকা লোকশান গুণতে হচ্ছে। এত সস্তা সবজি বাজার আগে কখনো বিক্রি হয়নি।