কার্বন নিঃসরণ কমাতে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রতিবছর ২ শতাংশ জিডিপি লোকসান হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন আগামীতে এটা ৯ শতাংশে পৌঁছাবে (জিডিপি লোকসান)।
এজন্য ১০টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। এতে ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া আরও ৬টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবেদন ছিল, সেগুলোও না করে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ইউরোপ সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু সম্মেলনের (১ নভেম্বর) বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কোন কোন বিষয় গুরুত্ব দেবেন- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কপ-২৬ শীর্ষক বৈঠকে ভাষণ দেবেন। সেখানে পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য তিনি কথা বলবেন। পৃথিবীকে রক্ষা করতে কী কী প্রয়োজন, এখানে প্রথম হচ্ছে, প্রতিটা দেশ তাদের এমডিসি এমনভাবে তৈরি করবে যাতে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের জলবায়ু তাপমাত্রা ১দশমিক ৫ সেন্ট্রিগ্রেটের মধ্যমে থাকে। বর্তমানে ২ ডিগ্রির মতো আছে। এটা কমাতে হবে। বিশেষ করে শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলো তারা গুরুত্বসহ কাজ করবে। যাতে জলবায়ুর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে চলে আসে। দ্বিতীয় হচ্ছে, ২০১৫ সালে যারা অঙ্গীকার করেছে যে জলবায়ু ফান্ডে ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে প্রতিবছর। আমরা সেটা চাইব। তৃতীয় হচ্ছে, গ্রিণ হাউজ প্রতিক্রিয়া আমাদের একেবারেই কম ৪.৫ এর মতো। সেখানে আমরা আরও কমাবো। এজন্য আমরা মুজিব প্রোসপারিটি প্লান নিয়েছি। সেখানে আমরা ৩ কোটি গাছ লাগিয়েছি।
তিনি বলেন, পৃথিবীকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী যে মুজিব প্রোসপারিটি প্ল্যান নিয়েছে আমরা চাই অন্যান্য দেশ তার অনুকরণে এরকম একটি প্ল্যান তৈরি করবে। যাতে করে পৃথিবীকে বাঁচানো যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে প্রতিবছর বহুলোক নদী ভাঙনের জন্য বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে। আমরা চাই কাদের পুনরায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে। এছাড়া আমাদের এ ধরনের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে অর্থের প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন ফোরামে এসব খাতে অর্থায়নের জন্য তাগাদা দিচ্ছি৷ এজন্য আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলার দিতে বলেছি। এটা অর্জনের পথে আছি আমরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। আমাদের প্রায় ২২ থেকে ২৫ শতাংশ জমি পানির নিচে চলে যাবে। অর্থাৎ ১২টি জেলা পানিতে ডুবে যাবে। এতে প্রায় ৩ কোটি লোক গৃহহীন হবেন। তাদের নিরাপত্তা কীভাবে দেব। আমরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরব। একা এ সমস্যা সমাধান করা যাবে না। এজন্য সব দেশকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটি বাতিল হয়নি। কারণ এটি অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ২০০ ফুট উপর দিয়ে ধোঁয়া যাবে। এতে কার্বন নিঃসরণের হার অত্যন্ত কম। তবে রামপালের ভয়টা হচ্ছে কয়লা আনার সময় কখনো যদি নদীতে পড়ে যায়, তখন দূষণ ছড়াবে। এ জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। রামপাল নিয়ে হৈচৈ বেশি হয়।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টিও সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। তাদের ফলে আমাদের জলবায়ুর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি এবং আবার তুলে ধরব।
এ বিষয়ে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কপ-২৬ এর সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার রওনা হচ্ছি। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় কিছু করা। আমরা এবার অত্যন্ত আশাবাদী। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার কথা থাকলেও এ বছর আমরা সেটা পাবো বলে আশা করছি। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জলবায়ুর সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন।