নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
তৈরি পোশাকখাতকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন বাজার সম্প্রসরণে ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এখন কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে দূতাবাসগুরোকে কাজে লাগাতে চান তারা। যার মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা, নতুন দেশের বাজার তৈরি এবং পোশাকখাতকে ব্র্যান্ডিং করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
আবার দেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের কাছেও নিরাপদ ও টেকসই পোশাক উৎপাদনের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। এভাবে বাজার প্রসার ও দেশকে পোশাকখাতে নেতৃত্ব দিতে শুধু রাষ্ট্রদূত, দূতাবাস নয়, সরকারি সহায়তাও চাওয়া হচ্ছে। সভা-সেমিনার করা হচ্ছে ক্রেতা বা ব্র্যান্ডের সঙ্গে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পোশাকশিল্পের কঠিন সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে। শিল্প এখনো কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, ইউরোপসহ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলো এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। আশা করা হয়েছিল যে, মহামারি পরিস্থিতির উন্নয়নের সঙ্গে পোশাকশিল্পও ঘুরে দাঁড়াতে সমর্থ হবে।
কিন্তু করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ও সংক্রমণ এই শিল্পকে আবার নতুন করে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এ অবস্থায় মহামারির চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সরকারের সহায়তা, দূতাবাসের আন্তরিকতা পেলে পোশাকখাতে বিশ্ব বাজারকে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।
দেশে গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে জারি করা লকডাউনের কয়েক দফায় ৬৫ দিন পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকে। একই সময়ে ভিয়েতনামে পোশাক কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত থাকায় রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশের খেতাব চলে যায় ভিয়েতনামের দখলে। গত বছর (২০২০) বাংলাদেশের থেকে একশ কোটি ডলারের পোশাক বেশি রপ্তানি করে দেশটি। গত বছর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৮শ কোটি ডলার আর ভিয়েতনামের ছিল দুই হাজার ৯শ কোটি ডলারের রপ্তানি।
তবে চলতি বছরের প্রথম সাত (জানুয়ারি-জুলাই) মাসের রপ্তানি পরিসংখ্যানে ভিয়েতনামের চেয়ে রপ্তানির পরিমাণ ২শ কোটি ডলার বেশি বাংলাদেশের। এ সময়ের মধ্যে ভিয়েতনাম রপ্তানির মাধ্যমে ১৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যেখানে একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। বছর শেষে পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে থাকবে দেশ, আশা উদ্যোক্তাদের।
সূত্নির জানায়, নিরাপদ কর্মপরিবেশ আর বিশ্ববাজার নিজেদের দখলে রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা কাজে লাগাতে চান দেশীয় পোশাক খাত উদ্যোক্তারা। এজন্য বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সাবেক রাষ্ট্রদূত যারা বাংলাদেশে নিযুক্ত ছিলেন তাদের মাধ্যমে দেশের পোশাকখাতের অবস্থান তুলে ধরছেন দেশের উদ্যোক্তারা।
সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করছেন ক্রেতা বা ব্র্যান্ডের সঙ্গে। এরই অংশ হিসেবে আমেরিকা-কানাডার মতো দেশে বিজিএমইএ’র প্রতিনিধিরা কাজ করছেন।
২০২১ সালের জানুয়ারি-জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে ভিয়েতনামের চেয়ে। এ সময়ের মধ্যে ভিয়েতনাম রপ্তানির মাধ্যমে আয় করেছে ১৬ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। যেখানে একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস, মার্কিন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠক হয়। সভায় অংশ নেন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উইলসন, টেক্সটাইল বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি উইলিয়াম জ্যাকসন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পরিচালক জেনিফার লারসন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের পরিচালক মরিন হ্যাগার্ডসহ ম্যাকলার্টি অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সহযোগিতার আহ্বান জানান বিজিএমইএ সভাপতিসহ একটি প্রতিনিধিদল। এসময় আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নে সহায়তা চান বিজিএমইএ নেতারা। টেক্সটাইল খাতে, বিশেষ করে নন-কটন খাতে মার্কিন ব্যবসায়ী ও অনাবাসিক বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার বিষয়ে আমেরিকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের কাছে সহযোগিতার কথা বলা হয়।
পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা অ্যামেরিকা-ইউরোপের পর এবার নজর দিতে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যে। এ লক্ষ্যে দুবাই এক্সপোর মাধ্যমে শুরু হবে এখানকার বাজার ধরার কাজটি। এর পরই কোরিয়াসহ এশিয়ার অন্য দেশেও তুলে ধরা হবে মেড ইন বাংলাদেশকে।
এ নিয়ে কথা হয় বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিরাপদ কর্মপরিবেশের দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু অনেক দেশই বিষয়টি সম্পর্কে জানে না। আমাদের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই আমরা আমাদের দেশকে তুলে ধরতে কাজ করছি। অনেক দেশের অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, অনেকের সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে। তারা যাতে দেশকে তুলে ধরেন, পোশাকখাত ও কর্মপরিবেশটিকে তুলে ধরেন। তাছাড়া দাতা সংস্থা, দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করছি ভবিষ্যতের ভালোর জন্য, ইমেজ ফিরে পেতে, পণ্যকে ব্র্যান্ডিং করতে।