নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁ জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ জমিতেই বছরে তিনটি ধানের আবাদ হয়ে থাকে। আর ধানকেন্দ্রিক জেলা হওয়ায় এক সময় প্রচুর ছোট ছোট চালকল গড়ে ওঠে নওগাঁয়। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ সহায়তা নিয়ে এসব চালকল গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি স্বয়ংক্রিয় চালকল বা অটো রাইসমিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ম্যানুয়াল চালকল বা হাসকিং মিলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকরা।
নওগাঁ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় ও জেলা চালকল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার ২০০টি চালকল গড়ে ওঠে। এগুলোর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় চালকল (অটো রাইসমিল) ৫৫টি, বাকি ১ হাজার ১৪৫টি হাসকিং মিল বা পুরোনো ম্যানুয়াল পদ্ধতির চালকল। বর্তমান সরকারি গুদামে চুক্তিবদ্ধ চালকল ৮৮৩টি। তার মধ্যে স্বয়ংক্রিয় চালকল ৫১টি আর হাসকিং মিল ৮৩২টি।
জেলায় প্রায় অটো রাইসমিল চালু থাকলেও হাসকিং মিলগুলো চালু রয়েছে প্রায় অর্ধেকের মতো। আর যেসব হাসকিং মিল টিকে রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও বেশ নাজুক। ধানের মৌসুমে জেলায় প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। এসব চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনি, কুমিল্লা ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার মান্দা উপজেলার বৌদ্দপুরে মেসার্স সরদার চালকল, মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর গ্রামে মেসার্স মোহাম্মদ আলী অ্যান্ড সন্স চালকল, মেসার্স নাজমা চালকল, খোদ্দনারায়ণপুর গ্রামে মেসার্স কল্পনা রাইসমিল, মেসার্স সরদার চালকল, মেসার্স বিসমিল্লাহ চালকল, চৌমাসিয়া এলাকায় মেসার্স সাহারা চালকল, মেসার্স রশিদা চালকল, চেংকুড়ি গ্রামে মেসার্স জব্বার চালকল, মেসার্স সেবা চালকল, মেসার্স জেবুন চালকল, মেসার্স সুরভি চালকল, বেলঘরিয়া গ্রামে মেসার্স রাফা চাল, মেসার্স শান্ত চালকল, মেসার্স গুপেশ চালকল, পিড়া গ্রামে মেসার্স কানাই ভদ্র চালকল, মেসার্স পুষ্প চালকল, মেসার্স মোকছেদ আলী মণ্ডল চালকল, মেসার্স রাবিয়া চালকল, হাট-চকগৌরিতে মেসার্স কানাই লাল ভদ্র চালকল, মেসার্স আমেনা চালকল, মেসার্স মল্লিক চালকল, মেসার্স হালিমা চালকল, মেসার্স শেফালি চালকল, মেসার্স সুখী চালকল, সদর উপজেলার হাঁপানিয়া এলাকার মেসার্স রুজিফা চালকল, মেসার্স কফিল উদ্দিন চালকল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব চালকলে গিয়ে কথা বলার মতোও তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। আবার কোনো কোনো হাসকিং মিল ভাড়া নিয়ে কেউ প্লাস্টিকের কারখানা, ফিড মিল বা কাঠের গুড়া শুকানোর কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার চালকলগুলোতে একসময় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। তবে হাসকিং মিলগুলো সারাবছর চাল উৎপাদন করতে পারে না। বছরে ৮-৯ মাসের মতো চালু থাকে। বিশেষ করে বর্ষা ও শীতকালে এই মিলগুলো বন্ধ থাকে।
হাসকিং মিলগুলোতে ধান থেকে চাল তৈরি করতে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। বর্ষা ও শীতকালে এক চাতাল (২০০ মণ) ধান শুকানো থেকে চাল করা পর্যন্ত ১৫-২০ জন শ্রমিকের ৭-১০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে হাসকিং মিলগুলো প্রতিযোগিতার বাজারে সময়মতো চাল উৎপাদন করতে পারে না। আর সময়মতো বাজার ধরতে না পারায় অনেকটা পিছিয়ে পড়তে হয়।
নওগাঁ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর কবীর বলেন, গত বোরো মৌসুমে সরকারি গুদামে ৮৮৩টি চালকল চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় চালকল (অটো রাইসমিল) ৫১টি এবং হাসকিং মিল ৮৩২টি। চুক্তিবদ্ধ চালকলগুলো চালু বলা হয়। তবে বন্ধ চালকলের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।