নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নদী দখল মুক্ত করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মনা হচ্ছে না। উপন্তু বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানই নদী দখল ও দূষণে যুক্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশবাদীরা। আন্তর্জাতিক জলবায়ু কর্মদিবস দিবস-২০২১- এ এই ‘দ্বান্দ্বিকতা’ থেকে মুক্তি চেয়ে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং ওয়াটার কিপার’স বাংলাদেশ।
রবিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ‘নদী ও জলাশয় বাঁচানোর দাবিতে মানবপ্রাচীর’ ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই ‘ধর্মঘট কর্মসূচি’ পালন করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও নদী রক্ষা জোটের আহ্বায়ক শারমিন মোর্শেদ। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ঢাকাকে আমরা সেই আগের ঢাকায় দেখতে চাই। যে ঢাকায় স্বচ্ছ নদী প্রবাহিত হতো, ছিল সবুজের সমারোহ; যা পরিবেশ দূষণের ফলে নিঃশেষ প্রায়।
প্রধানমন্ত্রী বারবার বলার পরও কেন নদী মুক্ত হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নদী অবমুক্ত করার জন্য কমিশন গঠন করছেন, টাস্ক ফোর্স গঠন করছেন; অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো, এমনকি খোদ ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডই নদী দখলের কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে, নদী দূষণ করার কাজে যুক্ত হচ্ছে। এই দ্বান্দ্বিকতার মুক্তি আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রীর নদী রক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে আমাদের সকলকে আসতে হবে এবং সরকারকে আরও বলিষ্ঠ জায়গায় আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কেন মানা হচ্ছে না- সেটিও আমার প্রশ্ন।’
ধর্মঘটে যুব বাপার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রাওমান স্মিতা মূল বক্তব্য পাঠ করেন। বক্তব্য পাঠকালে তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মানুষের পরিবেশ বিরুদ্ধ নানা কর্মকারের কারণে প্রাকৃতিক উৎপাদিকা শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং সামগ্রিকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের নদী, জলাশয়, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের বিপর্যয় আরও তরান্বিত হচ্ছে। আমরা এতদিন জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের জন্য শুধুই উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করেছি; কিন্তু বর্তমানে শুধু উন্নত দেশের মধ্যে এই দূষণ সীমাবদ্ধ নেই। বরং উন্নত, অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত, সবাই দূষণের প্রতিযোগিতায় সমানতালে মেতে উঠেছে। এ দূষণ এখনই বন্ধ না করলে আগামী দিনে বাংলাদেশ এবং গোটা পৃথিবী অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
এসময় তিনি বাপা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নদী ও জলাশয় রক্ষায় আট দফা দাবি পেশ করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো- নদী সংক্রান্ত হাইকোর্টের ২০০৯ ও সুপ্রিমকোর্টের ২০২০ সালের রায়ের সকল নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সকল নদীতে সঠিকভাবে সীমানা নির্ধারণ, বেদখলকৃত নদীর জমি উদ্ধার ও দখল, সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ ও নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
নদীতে সকল প্রকার দূষণ বন্ধ করার দাবি করে আরও বলা হয়, নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে সম্পদ আহরণ বন্ধ করতে হবে। নদীর জন্য ধ্বংসাত্মক অবৈজ্ঞানিক খননকাজ বন্ধ করতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে কার্যকর ও সক্রিয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠন করতে হবে।