সুমন ইসলাম
প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রমে পরিবর্তন আনছে সরকার। সরকারের এ পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওযা হয়েছে। পাশাপাশি তিন শ্রেণীতে দৈনিক শিখন ঘণ্টাও ৪৫ মিনিট বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এই স্তরে দৈনিক শিখন সময় সাড়ে তিন ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমানে তিন ঘণ্টারও কম ছিল।
তবে চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মৌলিক বিষয়গুলোতে ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক এবং ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এই দুই শ্রেণীতে দৈনিক শিখন সময় বাড়ছে না, চার ঘণ্টাই থাকছে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ‘পরিমার্জিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম’র পাইলটিং (পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন) চলতি বছরের আগস্টে শুরু হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে সবমিলিয়ে বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে কর্মদিবস থাকবে ১৮৫ দিন। সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন থাকছে। বছরে মোট ছুটি থাকছে ১৮০ দিন।
এ হিসেবে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীতে বছরে মোট ৬৪৭.৫ ঘণ্টায় শিখন কার্যক্রম হবে। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত-এই শ্রেণীতে বছরে মোট শিখন সময় থাকছে ৭৪০ ঘণ্টা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মশিউজ্জামান এই প্রতিবেদককে জানান, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের এখানে সময় অনেকটাই কম আছে। তাদের দেশে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে রেখে চাকরিতে চলে যায়, ফেরার পথে নিয়ে যায়। এ কারণে ইউরোপের স্কুলগুলোতে বাচ্চারা একটু বেশি সময় পায়। এতে মুখস্থ বিদ্যারও প্রয়োজন হয় না।’
এই বিবেচনায় বাংলাদেশে সময় ‘একটু বাড়লে’ শিক্ষকদের সঙ্গে শিশুদের সর্ম্পকও একটু বেশি হবে। এতে শিশুদের ওপর কোন চাপ থাকবে না। কারণ পরীক্ষা থাকছে না, শিশুদের অ্যাক্টিভিটিসের ওপরই সবকিছু মূল্যায়ন করা হবে।’
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয়। এক শিফটের বিদ্যালয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা এবং দুই শিফটের বিদ্যালয়ে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম চলে। এর মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে শ্রেণী কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়।
তবে দাপ্তরিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকারি নানা দায়িত্বপালন করতে হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের। এজন্য এক শিফটের বিদ্যালয় বিকেল সাড়ে ৩টা এবং দুই শিফটের বিদ্যালয় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত খোলা রাখতে হয়।
প্রাথমিকের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে বর্তমানে মৌলিক বিষয় তিনটি- বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। এছাড়া শারীরিক শিক্ষা বা সংগীত বা পরিবেশ পরিস্থিতি- এর যেকোন একটি বিষয়ের ক্লাস নেয়া হয়। এ হিসেবে বর্তমানে দৈনিক (১৬০ মিনিট বা ৩ ঘণ্টার কম) ক্লাস হয়।
অপরদিকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে বর্তমানে ৩টি মৌলিক বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) পাশাপাশি আবশ্যিকভাবে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং ধর্ম বা নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের ক্লাস নেয়া হয়। এছাড়া শিল্পকলা বা শ্রুতি শিখন বা সংগীত, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ে যেকোন একটি ক্লাস নেয়া হয়।
পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ১০০ ভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। তবে চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। আর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ১০০ ভাগ।