বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবস পালিত হচ্ছে আজ সারা পৃথিবীজুড়ে। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘মুজিববর্ষে শপথ করি, প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি’।
দিবসটিকে কেন্দ্র করে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি রাখা প্রয়োজন’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব ব্যবসায়ী ও ভোক্তার প্রতি আমার অনুরোধ প্রত্যেককেই অধিকার সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বশীল হতে হবে। তাহলেই একটি সুস্থ, আস্থাশীল বাজার ব্যবস্থা তৈরি হবে যার ফলে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ’।
ভোক্তার অধিকার সংক্রান্ত্র প্রথম আলোর এক প্রশ্নের উত্তরে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সঠিক দাম, মাপ ও মানের পণ্য পাওয়া ভোক্তার অধিকার। সেটা ভোক্তা পাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাসের ভাড়া নির্ধারিত হয় আসন অনুযায়ী, কিন্তু যাত্রী নেওয়া হয় গাদাগাদি করে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য সেবা দেওয়া সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব, তারা তা পালন করে না। গ্রামের মানুষ শহরের তুলনায় নিম্নমানের বিদ্যুৎ পায়। ইংরেজি মাধ্যম ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে কী পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়, কী মানের শিক্ষা দেওয়া হয়—তার কোনো তদারকি নেই। সরকারের বিনা মূল্যের বইয়ের ছাপা ও কাগজ হয় নিম্নমানের, বলার কেউ নেই।
এ অবস্থায় এম শামসুল আলম মনে করেন, ভোক্তাসংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণ, পণ্য ও সেবার দাম ও মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ব্যবসায়ীদের স্বার্থই বেশি দেখছে, ভোক্তার নয়।
প্রথম আলোর জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল প্রথম বাজার পর্যবেক্ষণ করে কাজ শুরু করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ পর্যন্ত তারা ৪১ হাজারের বেশি অভিযান চালিয়েছে। প্রায় ৯৭ হাজার প্রতিষ্ঠানকে ৬৮ কোটি টাকার মতো জরিমানা করেছে। এর বাইরে ১০ বছরে গ্রাহকের কাছ থেকে অধিদপ্তর ৩৯ হাজার ৮০১টি অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৯২টি বাদে বাকিগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অভিযানের আওতায় আসা প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ওষুধের দোকান ও বাজারের খুচরা বিক্রেতা।
বাংলাদেশে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে সরকার ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করে। এ আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ অধিদপ্তর।
জনগণকে অধিকতর সচেতন করার উদ্দেশ্যে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৬২ সালের এই দিনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার এক বক্তব্যে ভোক্তার চারটি অধিকার সম্বন্ধে তিনি আলোকপাত করেন। এগুলো হলো- নিরাপত্তার অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে আরও বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরও আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করে। কেনেডির ভাষণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে দিনটিকে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসাবে বৈশ্বিকভাবে পালন করা হয়।
বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আজ বিকাল ৩টায় রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।