ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
এক আত্মীয়ের মাধ্যমে একটি কাজের ভিসা পেয়েছিলেন ফেনীর সোনাগাজীর বাসিন্দা রাজীব। ভিসা সংক্রান্ত সকল কাজ শেষ হলে প্লেনের টিকিট করতে গিয়ে মাথায় হাত তার।
গত বছরের নভেম্বরেও যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্লেনের টিকিটের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। মহামারি করোনা কালে এখন তা ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। বাড়তি এ টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না রাজীবের। স্ত্রীর গয়না বিক্রি করতে বাধ্য হলেন তিনি। ৯০ হাজার টাকা দিয়ে টিকেট কিনে ওমানে পাড়ি জমান তিনি। এভাবেই নিজের পরিস্থিতির বর্ণনা দিলেন রাজীব।
তিনি বলেন, স্বজন ছেড়ে আসা কষ্টের, কিন্তু তার চেয়েও তখন অনেক বেশি কেঁদেছি যখন বিমান ভাড়ার জন্য স্ত্রীর গয়না বিক্রি করতে হয়েছে৷ এতে করে ভিসার খরচ ছাড়াও অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
রাজীবের মতো একই অবস্থা ফেনীর অন্য প্রবাসীদেরও। পরিবারের সুখ ও সমৃদ্ধির আশায় ভিটে মাটি বেঁচে, ধারদেনা করে দেশ ছেড়ে সুদূর প্রবাসে পাড়ি দেন প্রবাসীরা। করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে যখন বিদেশে বাংলাদেশের কর্মী যাওয়া শুরু করেছে, তখনই তাদের দ্বিগুণ বিমানভাড়া গুণতে হচ্ছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যগামী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন নতুন বিদেশগামীরা।
বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিমানের এ অতিরিক্ত ভাড়ার জন্য সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন নতুন কর্মীরা। অনেকে বাড়িঘর ও জমি বিক্রি করে, সুদে টাকা নিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হলেও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে বিদেশ যাত্রা থেমে রয়েছে অনেকের। এ ছাড়া শঙ্কায় রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটিতে আসা কর্মীরাও। হজ্ব ও উমরাহ্ যাত্রীদেরও গুনতে হচ্ছে বাজেটের চেয়েও কয়েকগুন অধিক ভাড়া।
যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা থেকে মধ্যপ্রাচ্যে বিমান টিকিটের মূল্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ থেকে একই গন্তব্যের এয়ার টিকিটের মূল্য বর্তমানে ৭০ থেকে ৯৫ হাজার টাকারও বেশি।
রাজ্জাক মির্জা নামে এক সৌদি প্রবাসী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছি তারা দেশে আসার সময় ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ করে আসা যাওয়ার টিকেট কেটে দেশে আসতাম। আসা যাওয়ার টিকেটের জন্য বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
প্রবাসে থেকে অর্থ উপার্জন করে দেশে ফেরার যে ইচ্ছা, তাতে টাকার বিষয়টা গুরুত্ব না পেলেও নতুন প্রবাসীদের জন্য এ চাপ নেওয়াটা কঠিন। অনেকে ধারদেনা করে, সুদের ওপর টাকা নিয়ে প্লেনের টিকেট কেটে প্রবাসে আসছে। আগে দেশে আসা যাওয়ার টিকিটের জন্য যে টাকা খরচ করতে হতো, বর্তমানে সে টাকা খরচ করতে হচ্ছে শুধু বিদেশ যাওয়ার জন্য।
তারা বলছেন, প্রবাসী কর্মীদের সুবিধার্থে বিশেষ ভাড়া নির্ধারণে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া সরকারি সংস্থা বিমানসহ অন্য উড়োজাহাজ সংস্থার মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট বাড়ানো যেতে পারে। এতে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা বাড়লে টিকিটের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। উড়োজাহাজ সংস্থার চাহিদা অনুসারে স্লট (ফ্লাইট সংখ্যার অনুমতি) বরাদ্দের প্রক্রিয়া দ্রুত করতে পারে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।