মো. আবদুল কাদেরঃ
চলছে তেলে ভাজা মুখরোচক খাবার তৈরির কাজ। ছোলা, চিকেন ফ্রাই, লুচি, বার্গারসহ নানারকম সব মজাদার খাবার। আনন্দের সাথে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে কিংবা পেটে ক্ষুধা নিবারণে এই খাবার গ্রহণ করছে সাধারণ মানুষ ও পথচারী।
একদিকে চলছে রান্না, অপরদিকে চলছে সড়ক মেরামতের কজ, বাতাসে উড়ছে পড়ে থাকা বালি। সেই বালু মিশছে খাবারের সঙ্গে। এ খাবার জন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি পূর্ণ।
বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশদূষণ কিংবা পানি দূষণ দূষণে পরিপূর্ণ যেন রাজধানী শহর। সাধারণ মানুষ রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এরমধ্যে তৈরি হচ্ছে লোভনীয় খাবার। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরীকৃত খাবার গ্রহণ করার ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বলছেন পুষ্টিবিদ।
ভিন্ন কথা বলছেন তৈরীকৃত খাবার দোকানের কর্মচারীরা। তাদের দাবী, রাস্তার পাশে তৈরি হলেও এতে শরীরে কোনো ক্ষতি করবে না। ফার্মগেট এলাকার ফুটপাতের এক দোকানী দাবি করে বলেন, বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে তার এই ব্যবসা। কখনো এই খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়নি। তাছাড়া তিনি নিজেও এটা গ্রহণ করেন বলে জানান তিনি।
তার মতো অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি এটা অস্বাস্থ্যকর জেনেও বাধ্য হয়ে খাবার তৈরী করছেন।
যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করে বলে জানান তিনি।
রাস্তার পাশে তৈরীকৃত খাবার কতটা নিরাপদ জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব বিশ্ববিদ্যালয় সিনিয়র পুষ্টিবিদ ডা. জাহানারা আক্তার সুমি ভোক্তাকন্ঠকে বলেন, ‘খাবার নিরাপদ কিনা তা নির্ভর করে সেটি কোন কোন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এবং সেটি কিভাবে তৈরি করা হচ্ছে, কিভাবে প্রিজার্ভ করা হচ্ছে এবং কিভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে তার ওপর। রাস্তার পাশের খাবারগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই বিষয় গুলো লক্ষ্য করে তৈরি করা হয় না বা পরিবেশন করা হয় না। তাই খাবারগুলো খাওয়া ফলে শরীর সহজে রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। এই খাবারগুলো নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এছাড়া ধুলাবালির কারণে সহজেই খাবার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় যার ফলে এসব খাবার গ্রহণ করলে শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।’
‘এ ধরনের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যেমন ফুড পয়জনিং, এসিডিটি বদহজম, কনস্টিপেশন, আইবিএস, ইত্যাদি। এছাড়া তিনিও বলেন, যারা অনেক্ষণ বাইরে থাকেন তাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের রোগী প্রতিদিন আমরা পেয়ে থাকি। বিশেষ করে আই,বি,এস (irritable bowel syndrome), এসিডিটি , খাবার হজম না হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য , ডায়রিয়া ইত্যাদি। প্রাথমিকভাবে এসব রোগের চিকিৎসা করা না হলে, ভবিষ্যতে আরও কঠিন রূপ ধারণ করতে পারে।’
এসময় তিনি ভোক্তাদের বাহিরের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন। ‘আমার পরামর্শ থাকবে যাদের কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিন ঘরের বাইরে যেতে হয় তারা যদি তাদের সময় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় খাবার এবং পানি ঘর থেকে নিয়ে যান তাহলে বাইরের খাবারের উপর নির্ভর করতে হবে না। হালকা কিছু খাবার যেমন বাদাম, বিস্কিট, খই মুড়ি, ফল , পানি এসব খাবার যদি সাথে থাকে তাহলে বাইরের খাবার এর উপর আর নির্ভরশীল হতে হবে না। যদি সেটা সম্ভব না হয় এবং একান্তই যদি রাস্তার খাবার খেতে হয় তাহলে খেয়াল রাখতে হবে সেটি ভালো ভাবে ঢাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে কিনা। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে তারপর খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পানি খেতে হবে সম্ভব হলে ডাবের পানি বা ফলের রস।’
শরীরের জন্য ক্ষতিকর জেনেও কেন এমন খাবার কিনতে আসা মামুন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘ফুটপাথের খাবার একদিকে যেমন সাশ্রয়ী তেমনি মিলছে হাতের নাগালে। ফলে প্রয়োজন হলেই পাওয়া যাচ্ছে যেকোনো সময়। এতে একদিকে যেমন সাধ্যের মধ্যে শখ মিটছে তেমনি তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে একদমই মন্দ নয়।’
সাবিত জাবির নামে এক শিক্ষার্থী জানান, যখন কেউ ক্ষুধার্ত থাকে তখন সে যেকোন কিছুই খেতে চায়। এক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে স্ট্রিট ফুড, ঝামেলা কম ও লোভনীয়। বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দই থাকে স্ট্রিট ফুড৷
এছাড়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত দের জন্যও ক্ষুধা নিবারণের সহজ পন্থা। কেননা অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বড় রেস্তোরাঁয় খাওয়া সম্ভব না হলেও কম দামে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডাও হয় আবার খাওযাও হয়।
এসময় সাবিত দাবী করেন, অস্বাস্থ্যকর খাবার শুধু রাস্তার পাশে ফুটপাতের খাবারে নই, নামি দামি রেস্তোরাঁতেও রয়েছে। তার মতে, ‘অস্বাস্থকর খাদ্য যে শুধু রাস্তার খাবারে তাও নয়৷ সেখানে শুধু ধুলোবালি কিন্ত বড় হোটেল গুলোতে যে পরিমানে মৃত গরু ছাগল এর গোশত ও মুরগী পরিবেশন করা হয় তা থেকে নিজেকে অনেকটাই নিরাপদ রাখা যায়।