ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক
বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলনের যেসব কূপ বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো থেকে ‘সেকেন্ডারি রিকভারি’ করে ফের গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। কাতার, নরওয়ে বা মেক্সিকোর মতো বিশ্বের গ্যাস উৎপাদনকারী অনেক দেশই ‘প্রাইমারি রিকভারি’ শেষে ‘সেকেন্ডারি রিকভারি’র মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করছে। বাংলাদেশের যেসব গ্যাসকূপ বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো থেকে ‘প্রাইমারি রিকভারি’র মাধ্যমে ৫০ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি অর্ধেক গ্যাস এখনো রয়ে গেছে।
এমনটাই জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের একমাত্র রিজার্ভার ইঞ্জিনিয়ার ও বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বজুড়েই গবেষণা বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হয়। পরবর্তী আরও দুটি ধাপে উত্তোলন করলে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো এরকম কোনো চেষ্টা কখনো করেনি।
বাংলাদেশের যে ন্যাচারাল রিজার্ভার রয়েছে, অর্থাৎ আমরা যেখান থেকে গ্যাস উৎপাদন করি, সেখানে কয়েকটি ধাপে করা হয়। যেমন, প্রাথমিক ধাপে রিজার্ভার প্রাকৃতিকভাবেই তার নিজস্ব শক্তি দিয়ে গ্যাস উপরের দিকে ঠেলে দেয়। আমরা মূলত সে গ্যাসটাই পেয়েছি, যেটা রিজার্ভার নিজস্ব শক্তিতে আমাদের দিয়েছে। তার পরিমাণ হলো ৫০ শতাংশ। ধীরে ধীরে ওপরের দিকে ঠেলে দেওয়ার এ শক্তিটা কমে আসে বলেই সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ গ্যাস আমরা পাই। বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে এই ৫০ শতাংশ গ্যাস উত্তোলন করেই উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ সেখানে ‘প্রাইমারি রিকভারি’ ও ‘সেকেন্ডারি রিকভারি’র মতো ধাপগুলোর দিকে মনোযোগী হওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
সেকেন্ডারি মেথডে বিশ্বের অনেক দেশ ‘ডাউনহোল গ্যাস কমপ্রেসার’র মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য খুব বেশি সক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু এ ‘ডিভাইস’টি মাটির নিচে বসিয়ে দিলেই হয়ে যায়। এরপর ডিভাইসটিকে শুধু অপারেট করতে হয়।
গবেষণায় আরো বলা হয়, ‘সেকেন্ডারি রিকভারি’র মাধ্যমে প্রায় ৩শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়াও বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের চারটি কূপ বন্ধ রয়েছে। এ কূপগুলোতে প্রাথমিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। এভাবে বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, মেঘনা, নরসিংদী গ্যাস ফিল্ড, সিলেট, কৈলাশটিলা, রশিদপুর, বিয়ানীবাজার, সালদা, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, শেমুতাং, সুন্দরপুর, শ্রীকাইল, বেগমগঞ্জ, রূপগঞ্জে যদি প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়ার্ক ওভার করে এবং ডিপ ড্রিলিংয়ে যায়, তবে উৎপাদন আরও বাড়বে।
এতে বলা হয়, আমাদের কোম্পানিগুলোর বর্তমানে পাঁচ হাজার মিটার পর্যন্ত খনন সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সাত থেকে আট হাজার মিটার নিচেও গ্যাস রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। দেশের প্রতিটি গ্যাস ফিল্ড নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যাবে, আমরা সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন করতে পারবো। রাষ্ট্রীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকেই তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসতে পারে, সেটা টেকনিক্যালি সম্ভব।