রোজা শুরুর আগেই আরেক দফা বাড়লো ভোগ্যপণ্যের দাম। ঘূর্ণিঝড় ফনি’র প্রভাবে বৃষ্টি হলেও, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠে। কাঁচাবাজারগুলোতে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। ইফতারের খাবার বানাতে চিনি, ছোলা ও খেজুরের চাহিদা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। তাই দাম বেড়ে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, দেশি মসুর ডাল ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকার জায়গায় এখন ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন বাজার তদারক করে দেখা যায়, এখন আমদানি করা রসুন প্রতিকেজি ১১০ টাকা, পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৩০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের ছোলা প্রতিকেজি ৭৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর বড়বাগে ধুন্দল কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, জালি কুমড়া ৫০ টাকা, লতি ৫০ টাকা, বরবটি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, পটল ও ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।
রোজাকে কেন্দ্র করেই সপ্তাহ খানেক আগে পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম একধাপ বেড়েছিল, যদিও দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের আহবান জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) । গত ৩০শে এপ্রিল মঙ্গলবার, সকাল ১১ টায় রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘সাগর-রুনি’ কনফারেন্স রুমে সংগঠনের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ভোক্তা অধিকার নিশ্চত করতে হলে সবার আগে জোর দিতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির ওপর। সারাদেশে ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষার বার্তা পৌঁছে দেয়া জরুরী। সেটি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের একক প্রচেষ্টা কিংবা সক্ষমতা দিয়ে সম্ভব হবে না। সরকারের আন্তরিকতা থাকতে হবে। পাশাপাশি সুধী সমাজকেও উদ্যোগী হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকেও।’
গত সপ্তাহে এসিআই, মোল্লা সল্টসহ কয়েকটি লবণের দাম বস্তায় (২৫ কেজি) অন্তত ১০০ টাকা বেড়েছে। আগে যেটা ৬০০ টাকায় পাওয়া যেত এখন তার জন্য দাম রাখা হচ্ছে ৭০০ টাকা। অর্থাৎ ব্র্যান্ডের প্যাকেট লবণের পাইকারি মূল্য ২৪ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক কেজি প্যাকেট লবণের গায়ে দাম লেখা আছে ৩৫ টাকা। টিসিবি প্রণীত মূল্য তালিকায় আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণের দাম দেখানো হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩৮ টাকা। এছাড়া বেড়েছে আদার দাম। ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, আটাসহ অন্যসব ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে। সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস।
রোজায় দ্রব্যমূল্য যাতে না বাড়ে সেজন্য গত ২৮ এপ্রিল রোববার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। নগর ভবনের ওই বৈঠকে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাসেম, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা ছিলেন।
ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেশনের কারণে আমদানি বেশি হওয়ার পরও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়বে না বলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে যে প্রতিশ্রুতি দেন, পরবর্তী সময়ে তা আর রক্ষা করা হয় না।সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণে, বাজার তদারকির সুফল এবারও সাধারণের অধরাই থেকে যাবে। নিত্যপণ্যের কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধির সুযোগে বাজার থেকে লুঠে নেয়া হাজার কোটি টাকা মধ্যস্বত্বভোগী ও মজুতদার থেকে আমদানিকারকদের একটি বড় অংশ ভোগ করলেও, মূল উৎপাদক তথা প্রান্তিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্তই থেকে যাবেন।