।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
ভোক্তা অধিকার রক্ষায় বাজারে তদারকি অভিযান চালিয়ে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ৭ ও ৮ জানুয়ারি দেশব্যাপী জেলায় জেলায় অভিযান চালানো হয়। বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের নেতৃত্বে এ দুই দিনে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়েছে।
পাশাপাশি অধিদপ্তরে ভোক্তারা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এই দুই দিনে। আইন অনুযায়ী কোনো ভোক্তা যদি পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হন তাহলে তিনি অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে যে জরিমানা করা হয় ভোক্তা তার ২৫ শতাংশ পেয়ে থাকেন। সেই হিসাবে এসব অভিযোগের বিপরীতে ভোক্তারা বুঝে পেয়েছেন ২১ হাজার ২৫০ টাকা।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের নেতৃত্বে ৭ জানুয়ারি অভিযান চালানো হয় ঢাকা মহানগর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, ফেনী, বরিশাল, রাজশাহী, কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর, কক্সবাজার, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী ও নীলফামারীতে। ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম, জামালপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, ফেনী, ভোলা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, কক্সবাজার, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সিলেট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরে আজ বাজার তদারকি করা হয়।
৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে ২২টি বাজার তদারকি ও ৩টি লিখিত অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। আদায়কৃত জরিমানা হতে ৩ জন অভিযোগকারীকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়।
এদিন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী ও জান্নাতুল ফেরদাউসের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরীর শেরে বাংলা নগর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বাজার তদারকি পরিচালনা করা হয়। বাজার তদারকিকালে পণ্যের মোড়কে এমআরপি লেখা না থাকার অপরাধে আরজু বিরিয়ানী এন্ড রেস্টুরেন্ট, আমানিয়া বেকারী ও রসের ফোঁটা এন্ড বেকারীকে যথাক্রমে ৫ হাজার টাকা, ১০ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য পণ্য তৈরির অপরাধে বাবুর্চি হোটেল ও মায়ের দোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টকে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রির অপরাধে লাইফ ফার্মাকে ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।
৮ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে ২২টি বাজার তদারকি ও ৩টি লিখিত অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৬৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। আদায়কৃত জরিমানা হতে ৩ জন অভিযোগকারীকে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা প্রদান করা হয়।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য তৈরি, পণ্যের মোড়কে এমআরপি লেখা না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ঔষধ বিক্রয়, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা, ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রয়, বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্রের কারচুপি, ধার্য্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয়, সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্নকারী কার্য, অবহেলা দ্বারা সেবাগ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য, জীবনহানি ঘটানো ও পণ্যের মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে এসব ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, সিভিল সার্জন, মৎস্য কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বাজার কর্মকর্তা, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধি এবং কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এসব তদারকি কার্যে সহায়তা প্রদান করেন। বাজার তদারকিকালে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভোক্তাদের মধ্যে লিফলেট ও প্যাম্পলেট বিতরণ করা হয়েছে।