।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
রাজধানীর শেরেবাংলানগরে শুরু হয়েছে ২৪তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। বুধবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।
সাধারণত প্রতিবছর ১ জানুয়ারি মেলা শুরু হয়ে থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এবার বাণিজ্যমেলা এক সপ্তাহ দেরিতে শুরু হলো। প্রতিবারের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশের মাঠে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আয়োজনে রয়েছে যৌথভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি)।
মেলায় যেকোনো অব্যবস্থাপনা রোধে ভ্রাম্যমান আদালত ও ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন। থাকবে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যমেরা। তবে জানা গেছে, মেলায় ভোক্তাকে সেবা দিতে ও ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাতে চায় ক্যাব-এর ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র।
ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক অরুণিমা ইসলাম বলেন, মেলা ঘিরে প্রতিবারই নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা থাকায় নিশ্চয়ই ভোক্তারা প্রতিকার পাবেন। আমরাও এই কার্যক্রমে অংশ নিতে চাই। ভোক্তা অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে মেলা প্রাঙ্গণে প্রচার চালাতে পারলে ভোক্তা উপকৃত হবেন। এর মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।
উল্লেখ্য, ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র রাজধানীর পান্থপথে একটি কল সেন্টার পরিচালনা করে। পণ্য কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানে ফোন করে অভিযোগ দায়ের করা যায়। অভিযোগ কেন্দ্রের তদারকিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহায়তায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। অভিযোগ প্রমাণীত হলে ভোক্তা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। আর জরিমানা হলে সেই অর্থ থেকে ভোক্তাকে ২৫ শতাংশ দেয়া হয়।
অরুণিমা ইসলাম বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, আশা করছি ভোক্তার পাশে থাকতে পারব। তবে বাণিজ্য মেলায় কোনো ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের কাছে আগের নিয়মেও অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ জানানোর ফোন নম্বর হলো ০১৯৭৭০০৮০৭১। তাছাড়া [email protected] এই ই মেইলেও অভিযোগ পাঠানো যাবে।
সংবাদসংস্থা বাসস জানিয়েছে, এবারের মেলায় ভিন্ন আঙ্গিক আনার চেষ্টা করা হয়েছে। মেলার ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য খোলামেলা জায়গা ও গ্রিনজোন রয়েছে। যাতে পরিবার ও পরিজনদের নিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। আর মেলার দুই প্রান্তে সুন্দরবনের আদলে ইকো পার্ক করা হয়েছে। রয়েছে ডিজিটাল এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার (ডিজিটাল টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তি)। যাতে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট স্টল ও প্যাভিলিয়ন অতি সহজে খুঁজে বের করতে পারেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা শুরু হলেও এখনও শেষ মুহূর্তের কিছু কাজর্ম চলছে। মেলা সংশ্লিষ্টরা আশা করেন, শুক্রবারের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং সেদিন থেকে মেলা জমে উঠবে। এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের মধ্যে রয়েছে- ভারত, পাকিস্তান, চীন, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ভুটান, নেপাল, মরিশাস, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, রাশিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, সোয়াজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও হংকং।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারো সূত্রে জানা যায়, এবারের মেলায় থাকছে মা ও শিশু কেন্দ্র, শিশুপার্ক, ই-পার্ক ও পর্যাপ্ত এটিএম বুথ। এছাড়াও রেডিমেড গার্মেন্ট পণ্য, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যও থাকবে। তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রীসহ থাকবে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী ও ফার্নিচার সামগ্রীর সবমিলিয়ে ৫৫০টি স্টল থাকছে এবারের মেলায়।
এছাড়া মহিলা স্টল থাকবে ২০টি, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬০টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৩৮টি, সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৮, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ২৯টি, প্রিমিয়ার স্টল ৬৭টি, রেস্টুরেন্ট তিনটি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৯টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৬টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৬টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৯টি, বিদেশি প্রিমিয়ার স্টল ১৩টি, সাধারণ স্টল ২০১টি ও ফুড স্টল থাকবে ২২টি।