গণপরিবহন, বিশেষ করে পাবলিক বাসগুলোতে নারীদের যাতায়াত সব সময়ই বিপজ্জনক। সিটের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে নারীরা। এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যৌন হয়রানিসহ নানা কারণে পাবলিক বাস সব সময়ই নারীর কাছে এক আতঙ্ক। সেই সঙ্গে রয়েছে বাসের কাঠামো।
নারী যাত্রীরা বলছেন, সিট চাপিয়ে সংখ্যা বাড়ানো হয় বাসে। এ কারণে সিটে বসতে হয় বাঁকা হয়ে। এ ছাড়া রয়েছে নারীর জন্য নির্ধারিত চালকের পাশের জায়গা, যেখানে বসতে হয় ইঞ্জিনের ওপরে।
চিকিৎসকরা বলছেন, বাসে যেভাবে নারীদের বসতে হয় সেটা শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে এটা মারাত্মক আকার ধারণ করে।
ইঞ্জিনের ওপরে বসে থাকা অবশ্যই একটি ‘এনভায়রনমেন্টাল হ্যাজার্ড’ উল্লেখ করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, সমস্যা তো হবেই। পা যখন ছড়িয়ে বসা যাবে না, সেখানে কিছু সমস্যা তৈরি তো হবেই। সেটা তাৎক্ষণিক যতটা না বোঝা যাবে, তারচেয়ে বেশি ভোগান্তি হবে বয়স বাড়ার পর।
‘পা ব্যথা হবে, মাসল সঠিকভাবে কাজ করবে না, মাসলক্র্যাম্ব করবে- এগুলো ভবিষ্যতে বড় ভোগান্তি তৈরি করবে’।
কোমর-হাঁটুর ব্যথা হবে জানিয়ে অধ্যাপক জাহেদ হোসেন বলেন, এজন্য মুক্তি পেতে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে।
এদিকে, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, গরম ইঞ্জিনের ওপর দিনের পর দিন যদি কোনও গর্ভবতী নারীকে যাতায়াত করতে হয়, তাহলে তার গর্ভের সন্তান জরায়ুর ভেতরেই মারা যেতে পারে।
‘এটা অনেক বড় এক সমস্যা, যেটা এতদিন খুব একটা উচ্চারিত হয়নি। অথচ নিজের অজান্তে বা সামাজিক এক অরাজকতার জন্য গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হচ্ছে তার জন্ম নেওয়ার আগেই’।
শারীরিকভাবেও স্বাচ্ছন্দ্য-স্বস্তিবোধ করে না মন্তব্য করে ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘কোনও নারী যদি গর্ভবতী বা সদ্য সন্তান প্রসব করে তাকে বাসে এভাবে বসতে হয়, তার বসার ধরন- সবকিছুই অস্বস্তিকর এবং অস্বাস্থ্যকর।’
‘সেই সঙ্গে রয়েছে মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা; যা নারীর শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। আর এ থেকে তৈরি হয় আরও বড় সমস্যা।’
কোনও বাসই নারীদের স্বস্তিমতো বসার জন্য উপযোগী নয়’- বলেন উত্তরা থেকে নিয়মিত যাতায়াত করা জেসমিন সুলতানা।
প্রথমত, বাসগুলো একদমই যাত্রীবান্ধব ও সুবিধাজনক নয়। আর নারীদের জন্য সেটা আরও কষ্টকর। বাসের সিট অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়েও আপত্তি রয়েছে তার। বলেন, নারীদের জন্য সিট ইঞ্জিনের পাশে রাখা, এটা আমার খুবই আপত্তির জায়গা।
তিনি আরও বলেন, বাসে উঠলেই নারীদের বলা হয় ড্রাইভারের পাশে ইঞ্জিনের ওপরে মেয়েদের সিট, সেখানে বসেন। অথচ সে জায়গাটা প্রচণ্ড গরম থাকে। এমনকি গরমের কারণে ঠিকঠাক বসাও যায় না।
‘আর সেখানে বসতে অস্বীকৃতি জানালে চালক-হেলপারসহ যাত্রীদের কটূক্তি সহ্য করতে হয়।’
সেইসঙ্গে সিটগুলো এমনভাবে সেট করা, কোনোভাবেই স্বস্তি নিয়ে বসার সুযোগই নেই। দুজন যাত্রী যদি পা সমান করে বসতে চান, সেটা সম্ভব হবে না। বাসের সিট অ্যারেঞ্জমেন্টে এখন কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনও কিছু বাস রয়েছে, যেখানে ইঞ্জিনের ওপর কেবল একটি কাঠের তক্তার মতো বিছানো। শক্ত এ কাঠের ওপর বসে থাকাটা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, বলেন জেসমিন পাপড়ি।