বিদ্যুতের দাম বাড়লে মনের আগুন দাবানলে রূপ নেবে: ক্যাব সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে মানুষের মনের আগুন দাবানলে রুপ নিতে পারে বলে মনে করছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

মূল্যবৃদ্ধি না করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসখাতের আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ের বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুরে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (প্রস্তাবিত)’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য নাগরিক সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে গোলাম রহমান বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি সরকার সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করতে কার্পণ্য করবে না। আমরা যেটুকু দেখি তাতে মনে হয় মিতব্যয়িতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা গেলে অনেক সাশ্রয় হতো। জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। এখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সংকট থেকেই যাবে।

দেশের কয়লা ক্ষেত্রগুলো ফেলে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়ছে, মানুষের অবস্থা খারাপ। সরকার বলছে, বিশ্বব্যাংক বলছে মানুষের আয় বেড়েছে। হয়তো বেড়েছে, কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ জনগণ কিন্তু অনেক সংকটে রয়েছে।

এসময় তিনি বহিঃবিশ্বের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমেরিকার মতো মূল্যস্ফীতি আমাদের দেশে হয়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎ জ্বালানির মতো পণ্যের প্রশাসনিক প্রাইস। আমরা যাতে দেশেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি সেই দিকেও লক্ষ রাখা দরকার।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ব বিভাগের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) বদরূল ইমাম বলেন, আজকের এই সংকটের মূলে হচ্ছে চড়া এলএনজি আমদানি করায়। আমরা স্পর্ট থেকে আর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছি। দাম বেড়েছে স্পর্ট মার্কেটে। আমরা যদি যথাযথভাবে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান করতে পারি তাহলে এই সঙ্কট কেটে যাবে।

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্যাবের উদ্যোগটা ভালো, আমি কিছু অংশ দেখেছি। তবে আরও গঠনমূলক পরামর্শ দিতে পারেন যাতে কাজে আসে। আরও একটু আধুনিক করা যায় কিনা ভেবে দেখা দরকার। কালকে যদি ৮শ মিলিয়ন গ্যাস আমদানি বন্ধ করি, তাহলে কি হবে সব শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা কি শিল্প বন্ধ করে দেবো।

কয়লা উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমি নিয়ে যদি কয়লা উৎপাদন করি তাহলে কি হবে। ফসল উৎপাদন কমে যাবে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। সামান্য পরিমাণে উত্তোলন করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, অনেকে মনে করেন সমুদ্রে গেলেই কালকে গ্যাস পাওয়া যাবে। এমন ধারণা সঠিক নয়, গ্যাস পেলেও আনতে ১০ বছর সময় লাগবে। সাগরে মাল্ট্রি ক্লেইন সার্ভে হচ্ছে, তারপর দেখব এটা আনা সাশ্রয়ী হবে কিনা। আমরা গ্যাস দিচ্ছি, নতুন নতুন শিল্প কারখানা হওয়ায় চাহিদা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ক্যাবের বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, বিতরণ ও সঞ্চালন লাইসেন্সির পুঞ্জিভূত নীট মুনাফার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এমন মুনাফা বিইআরসি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এবং লুন্ঠনমূলক। গ্যাসের চুরি কমানো গেলে দৈনিক ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি কম করলেও চলবে। চুরি কমানো, উৎস ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হলে ভর্তুকি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। জ্বালানি খাতে সর্বক্ষেত্রে লুন্ঠনমূলক ব্যয় এবং অবচয় ব্যয় সমন্বয় হলে ভর্তুকি কিংবা মূল্যবৃদ্ধি কোনটারই প্রয়োজন পড়ে না। বরং ইউনিট প্রতি ১৬ পয়সা কমানো সুযোগ রয়েছে।

ক্যাবের বিকল্প প্রস্তাবে আরো বলা হয়, কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ৭০ শতাংশ হারে চালানো গেলে নীট উৎপাদন বাড়ে ৪১২ কোটি ইউনিট। হ্রাসকৃত গ্যাস সমন্বয়ের পর নীট খরচ বাড়ে ২ হাজার ৩০৮ কোটি ঘনফুট। অন্যদিকে ফার্নেস অয়েল প্লান্টে দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হলে ৫ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা কমানো যায়। পাইকারি বিদ্যুতে নতুন করে কর আরোপ না করলে ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। আমদানি পর্যায়ে ফার্নেস অয়েলের উপর শুল্ক কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করায় ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে। পাইকারি মূল্যহারের সমন্বয়হীনতা দূর করা গেলে ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা ঘাটতি কমানো যায়।

এসআর