সবশ্রেণির গ্রাহকদের জন্য ১ মার্চ ২০২০ থেকে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা তখনই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এর ফলে সব কিছুর মূল্য বাড়বে। ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিতে পারে। মাত্র দেড় সপ্তাহের মাথায়ই তেমন নজির মিলল। আর সেটা ঘটল সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটায়। প্রতি লিটার দুধের দাম ৫ টাকা ও আধালিটারে ৩ টাকা করে বাড়িয়েছে কোম্পানিটি। যা ১০ মার্চ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। দুধের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়েছে মিল্কভিটা। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পাস্তুরিত তরল দুধ শিশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়।
মিল্কভিটার দুধের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গ্যাসের দাম বেড়েছে অনেক আগে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ায় প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো পুরোপুরি অযৌক্তিক। সরকার নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিটি দুধের দাম বাড়ানোর কারণে বেসরকারি কোম্পানিগুলোও দাম বাড়িয়ে দেবে। জরুরি শিশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত তরল দুধের দাম এভাবে বাড়ানো ঠিক হয়নি, এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ালে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার যে আশঙ্কা আমরা করেছিলাম, এখন তাই সত্যি হলো।
সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানটির এই দাম বাড়ানোর ঘটনায় বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোও প্যাকেটজাত পাস্তুরিত দুধের দাম দুই-এক দিনের মধ্যে বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর দোকানদাররা। শাহজাদপুরের মুদি দোকানি প্রিন্স গতকাল বলেন, ‘সরকারি কোম্পানি দাম বাড়ালে বেসরকারি কোম্পানি কি আর বসে থাকবে। প্রাণ, আড়ংসহ বেসরকারি কোম্পানিগুলো দুই-এক দিনের মধ্যেই দাম বাড়াবে।
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় মিল্কভিটার দুধ সরবরাহকারী এক কর্মীর সঙ্গে। তিনি জানান, কোম্পানি থেকে দাম বাড়ানোর কারণ উল্লেখ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিতরণের জন্য একটি লিফলেটও দিয়েছে। তাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াসহ প্যাকিং সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিতে খরচ বাড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যতটুকু জানি, বেসরকারি কোম্পানিগুলো এখনো দাম বাড়ায়নি। তবে মিল্কভিটার দাম বাড়ানোর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি কোম্পানিগুলো তাদের প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম বাড়িয়ে দেবে। ‘মিল্কভিটা পাস্তুরিত তরল দুধের মূল্য পুনঃনির্ধারণ’ শিরোনামে কোম্পানিটির লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘সম্মানিত খুচরা বিক্রেতাবৃন্দ, বর্তমানে গ্যাস, বিদ্যুৎ, প্যাকিং সামগ্রিসহ সকল উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে মিল্কভিটা পাস্তুরিত তরল দুধের বিক্রয়মূল্য কর্র্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে পুনঃনির্ধারণ করা হইয়াছে। যাহা ১০ মার্চ ২০২০ খ্রি: হইতে কার্যকর হইবে।’
মিল্কভিটার ব্যবস্থাপক (বিপণন) মো. হরমুজ আলী গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় দুধের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এতদিন মিল্কভিটার ১ লিটার দুধের প্যাকেটের খুচরা মূল্য ছিল ৬৫ টাকা। গতকাল থেকে তা ৭০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া আধা লিটারের দাম ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৮ টাকা, ২৫০ মিলিলিটারের প্যাকেট ১৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা এবং ২০০ মিলিলিটারের প্যাকেট ১৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে মিল্কভিটার পাশাপাশি প্রায় ৯৬টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাস্তুরিত তরল দুধ উৎপাদন ও বিপণন করে থাকে। এর মধ্যে আড়ং, প্রাণসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড জনপ্রিয় হলেও বাজারে মিল্কভিটার দুধের চাহিদাই বেশি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে দেশে ৭০ লাখ টন দুধ উৎপাদন হয়েছে, আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৯৪ লাখ টন।
(খবর : ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র, নিউজ সেল)