বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সরকারকে প্রতি ইউনিটে ৪৯ পয়সা ভর্তুকি দিতে হবে। আর ভোক্তাকে গুনতে হবে ৩৮ পয়সা। সুতরাং বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ন্যায়সঙ্গত হয়নি বললেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
আবাসিক বা শিল্পখাত, যে কোনো পর্যায়ের ভোক্তার জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক এর ফলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে আর কঠিন হবে সাধারণের জীবনযাত্রা বলে মনে করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম।
বিদ্যুৎ খাতে ‘অযৌক্তিক’ ব্যয় না কমিয়ে সরকার জনগণের ব্যয়ভার বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় ভোক্তাকণ্ঠকে এ প্রতিক্রিয়া জানান ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিইআরসির দায়িত্ব হচ্ছে ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষা দেওয়া। ভোক্তাদের স্বার্থ এবং অধিকার তখনই সুরক্ষিত হবে, যখন ভোক্তা অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি থেকে রক্ষা পাবে। অথচ অযৌক্তিক ব্যয় ধরে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিইআরসির দায়িত্ব হচ্ছে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। বিইআরসির কাছ থেকে ভোক্তারা ন্যায়বিচার পায়নি। তারা ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি ভোক্তাকণ্ঠকে জানান, ‘এই অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধির যে ঘাটতি রয়েছে, সেই ঘাটতি অযৌক্তিক। ফলে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবও অযৌক্তিক। ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। সেখানে মাত্র ছয় পয়সা সমন্বয় করে, সেটাকে যৌক্তিক ধরে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ’
গত বছরের জুনের শেষদিকে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠাতে শুরু করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এসব প্রস্তাবের ওপর গত ২৮ নভেম্বর গণশুনানি শুরু হয়। তাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) পাইকারিতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ২৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।
অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন , বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবটা যৌক্তিক ছিল না। আমরা বলেছিলাম এখানে অযৌক্তিক ব্যয় রয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। আমরা অযৌক্তিক ব্যয়গুলোকেও চিহ্নিত করে কমিশনের কাছে তুলেও ধরেছিলাম।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩৬ পয়সা বাড়িয়েছে আর পাইকারি পর্যায়ে গড়ে বাড়ানো হয়েছে ৪০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। নতুন দাম আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। আজ বৃহস্পতিবার বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল তাঁর কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন।
গণশুনানিতে ক্যাব উপদেষ্টা বলেছিলেন, “কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর প্রয়োজন না থাকলেও সেগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। এই কারণেই পিডিবির ঘাটতি বাড়ছে। এ ধরনের কাজের দায়ভার চাপানো হচ্ছে জনগণের ওপর।” আর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বিদ্যুৎ খাতেও চালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন অধ্যাপক শামসুল।
ক্যাব উপদেষ্টা আরো বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করার জন্যই বিইআরসির কাছে প্রস্তাব আসে। বিদ্যুতের মূল্য কমানোর কোনো প্রস্তাব আসে না। আমাদের কনজ্যুমারদের মূল্য কমানোর কোনো প্রস্তাব নিয়ে যাবার অধিকার নেই বিইআরসির কাছে।
‘বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসলেই যদি সেটা বৃদ্ধি হয় এবং ভোক্তাদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষার করার আইনি এখতিয়ার বিইআরসির, তখন সেই আইন প্রহসনমূলক বলা যায়,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানাতে হয় বিইআরসিকে। ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা এল বিইআরসি থেকে।