যশোর প্রতিনিধি:
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪৯৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে এক হাজার ১৮৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চারমাসের চেয়ে ৫৪ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ওই বছরে আদায় হয়েছিল এক হাজার ১৩০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি পণ্য থেকে চলতি বছর বেনাপোল কাস্টমসকে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বছরটিতে রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অন্যান্য সময়ের চাইতে বেশি হলেও ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।
বেনাপোল কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১২ কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ২৩৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগস্টে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯৪ কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ৩৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং অক্টোবর মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ২৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
শুল্ক ফাঁকি ও নানা অব্যবস্থাপনায় অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছাড়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে এ বন্দরের কাস্টম হাউসে রাজস্ব ঘাটতি হয়ে আসছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, গেল দুবছর করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা ভারতে যেতে না পারায় চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারেননি। এতে রাজস্ব আয় ব্যাহত হয়েছে। তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যেসব অবকাঠামো বেনাপোল বন্দর ও কাস্টম হাউজে থাকার কথা তা অনেকটা নেই। এতে লোকসানের কবলে পড়ে অনেকে এ পথে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। এটাও বেনাপোল বন্দরে কয়েক বছর ধরে রাজস্ব ঘাটতির কারণ।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বেনাপোল কাস্টমে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে মাসের বেশি সময় লেগে যায়। ফলে যেমন সময় অপচয় হয় তেমনি বন্দরে আটকে থাকা পণ্যে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বিএসটিআই ও বিএসআইরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রশিদ বলেন, পেট্রাপোলে ব্যাপক জটের কারণে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। আবার সয়াবিন তেল রফতানির কারণেও বেনাপোলে জট ছিল। ফলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ পূরণ হয়নি। তবে আশা করছি আগামী মাসগুলোতে বাণিজ্য চাঙা হলে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। তবে গতবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ এবার বেশি। সঠিক নিয়মে রাজস্ব আদায়ে সক্রিয় হয়ে কাজ করছেন কাস্টমস সদস্যরা। যারা অনিয়ম করার চেষ্টা করেছেন তাদের জরিমানা, লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।