কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করায় চটেছেন ক্রেতারা। চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে এক কেজি তরমুজের দাম চলছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।সিন্ডিকেট তৈরি করে এভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীরা। আর এতে ক্রেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিচ হিসেবে কিনলেও বিক্রি করছেন কেজি হিসেবে। ফলে মুনাফা অর্জনে দেখা দিচ্ছে এক অসম প্রতিযোগিতা।
এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক পণ্য বিক্রয় আইন, ‘১৯৩০–এর “দাম” অধ্যায়ের ৯ (১) ও ৯ (২) ধারায় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে বলা হয়েছে, পণ্যের মূল্য পক্ষগণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে বা পক্ষগণের ইচ্ছামতো আলোচনা মাফিক হতে পারে।
যে ক্ষেত্রে, উপরিউক্ত উপায়ে মূল্য নির্ধারিত হয়নি, সে ক্ষেত্রে ক্রেতা, বিক্রেতাকে একটি যৌক্তিক মূল্য পরিশোধ করবে। তবে পরিশোধিত মূল্যটি যৌক্তিক কি না তা নির্ধারিত হবে বিদ্যমান পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে।’
এই যৌক্তিকতার দোহায় দিয়ে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে দোকানে মূল্যতালিকা প্রদর্শন করেই তাঁদের পকেট কাটতে দেখা যাচ্ছে। অথচ আইনের দুর্বলতার কারণে বর্তমান সময়ের আলোচিত ও প্রশংসিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নালিশি সেবা পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রেতারা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯–এর সংশ্লিষ্ট বিধানে প্রতিষ্ঠানে মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করার দণ্ড সম্পর্কে ৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা লটকাইয়া প্রদর্শন না করে থাকলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
এর মানে মূল্যতালিকা দেখিয়ে দোকানি আপনার কাছ থেকে মূল্য আদায় করতে পারেন। কিন্তু আরোপিত মূল্যের যৌক্তিকতা আর যাচাই হলো না। ফলশ্রুতিতে এই সকল কিছুর সুযোগ নিয়েই চলছে বাজারে অসম প্রতিযোগিতা।
পিস হিসেবে কেনা তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে। যেখানে উৎপাদন মুল্যের চেয়ে ৫-৬ গুন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ।
কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪ ধারায় কৃষি পণ্যের এমন অসামঞ্জস্যতা দূর করার লক্ষে বলা হলেও দেখা যায় না কার্যক্রমে । এই আইনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে,
কৃষি বিপণন তথ্য ব্যবস্থাপনা, কৃষিপণ্যের মূল্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। আইনে উল্লেখ্ থাকলেও প্রতিফলিত হচ্ছে না বাজার তদারকির ক্ষেত্রে ফলে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোক্তাকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে মুনাফাখোর ব্যাবসায়ীরা।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্য ও সেবার মূল্য নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। ভোক্তা যুক্তিশীলতার সঙ্গে দাম যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেবেন, এটা অর্থনীতির মুখস্থ বুলি। কিন্তু বাস্তবিকতা হলো আমাদের দেশে কিছু কিছু পণ্য ও সেবার বিপুল জোগান থাকার পরেও তৎসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং অতি মুনাফাখোর কুচক্রী ব্যবসায়ীদের সুযোগ সন্ধানী মন ভোক্তাকে বোকা বানিয়ে ফায়দা লোটে।