অন্য পেশায় ঝুঁকছেন অনেক শিক্ষক। এ জন্য আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাজেটে সবসময় স্বতন্ত্র খাত হিসেবে শিক্ষা অবহেলিত। কোভিড মহামারির মধ্যে শিক্ষার বিষয়টি মনে রাখছি না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি খাদ্য ও স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় আমাদের নজর থাকলেও আমি বলব, শিক্ষকদের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এমপিওভুক্তির বাইরে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। কোভিডের নেতিবাচক প্রভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক হাজার হাজার শিক্ষক অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন। কারণ তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তাহলে বাজেটে তাদের জন্য কী বরাদ্দ থাকছে? তাদের মতো মূল ধারার শিক্ষকের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দ রাখা উচিত।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মে ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ দাবি জানান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কনভেনর ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সেখানে যুক্ত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্যরা।
এছাড়া আছে শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ রাখা। সবচেয়ে বড় কথা সঠিক তথ্য-উপাত্ত। কোভিডের মধ্যে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কতজন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে? তাদের বর্তমান অবস্থা কী আমরা জানি না। শিক্ষায় বৈষম্য সবসময় ছিল। যা বর্তমানে আরও প্রকট হয়েছে। যাদের কোনো ধরনের ডিভাইসের সাহায্য নেওয়ার সক্ষমতা নেই। সেসব শিক্ষার্থীরা এখন বাল্যবিবাহ ও শিশু শ্রমের দিকে ঝুঁকছে। সেজন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রণোদনাসহ বরাদ্দ রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২৫০০ টাকা ৫০ লাখ মানুষের মাঝে বিতরণ করার কথা থাকলেও গত বছর ৩৫ লাখের বেশি মানুষের কাছে তা পৌঁছায়নি। বাস্তবায়ন হয়নি ৩০ শতাংশের বেশি। এবারও কিন্তু তাদেরকেই আবার সাহায্য করা হচ্ছে। সহায়তার আওতা কিন্তু বাড়েনি। অর্থাৎ সরকার তাদের ব্যয় করার ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেনি। বর্তমানে সরকারের পাইপলাইনে চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য রয়েছে। আসলে অর্থের অভাব নেই, অভাব ব্যয় করার যোগ্যতার। আসলে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারছি না। বরং সরকারি ব্যয় করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দৃশ্যমান হচ্ছে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় গত দেড় বছরে ২৫টি কর্মসূচি সরকার হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি নতুন ও ছয়টি পুরনো। মোট ব্যয় ১২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ সাহায্যের পরিমাণ মাত্র ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ এক ধরনের প্রণোদনার নামে সহজ শর্তে ঋণ। আবার প্রত্যক্ষ সাহায্যের মধ্যে কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ অনেক কম। প্রত্যক্ষ সাহায্যের মধ্যে সরকারের সামাজিক কর্মসূচির সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।