দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্যাকেজ-১১-এর আওতায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘বাগাদিয়া ব্রাদার্স’ থেকে এ চাল আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬ ডলার হিসেবে চাল আমদানিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১৭৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
বিভিন্ন পত্রিকা থেকে জানা যায়, দরপত্র প্রক্রিয়ায় ভারতের তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। অপর দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘পি. কে এগ্রি লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড’-এর প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি মেট্রিক টন ৪২৯ ডলার এবং ‘কেআরবিএল লিমিটেড’-এর প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি মেট্রিক টন ৪৩৪ ডলার। ‘দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি’ তিনটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সর্বনিম্ন দরদাতা (প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬ ডলার) হিসেবে ‘বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড’-কে মনোনীত করেছে। আমদানিতব্য ৫০ হাজার মেট্রিক টন চালের মধ্যে ৬০ শতাংশ চট্রগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এবং বাকি ৪০ শতাংশ মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হবে।
খাদ্য অধিদপ্তর-এর হিসাব মতে, গত ২৪ মার্চ দেশে মোট খাদ্যশস্যের মজুতের পরিমাণ হচ্ছে ৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ৪ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন এবং গমের পরিমাণ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন।
সংস্থাটির গত ফ্রেরুয়ারির হিসাবে, চলতি অর্থবছর শেষে অর্থাৎ আগামী জুন শেষে খাদ্যের নিরাপত্তা মজুদ হিসাবে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ মেট্রিক টন গম থাকা আবশ্যক। সে হিসাব ধরে অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য আরও ১১ লাখ ৬ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৭১ টন গম প্রয়োজন।
সূত্রমতে, বিপুল পরিমাণ এ চাহিদার বিপরীতে সাম্প্রতিক সময়ে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র একাধিক বৈঠকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সরকারি পর্যায়ে (জি-টু-জি) ও আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও দেড় লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় এখনো প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা প্রয়োজন।
জানা যায়, ইতিমধ্যে ২ দশমিক ০৮ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং জি-টু-জি ভিত্তিতে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া জি-টু-জি ভিত্তিতে আরো সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে সরকার ঘোষিত ধান ও চালের মূল্য বাজার দরের তুলনায় কম হওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গত বোরো মৌসুমে ধান ও চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি আমন মৌসুমেও এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে মনে করছে খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগের হিসাব মতে, গত বোরো মৌসুমের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এছাড়া চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান ও সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন ধান ও ৫২ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।