করোনাভাইরাসে তিনজন আক্রান্তের খবর প্রকাশের পর দেশের পণ্যবাজারে ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপ অনুভব করছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদি সামগ্রী কিনতে ক্রেতারা বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ায় এসব পণ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কোনো পণ্যের চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ কম থাকলে সেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়, এটি বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। ফলে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি কয়েকগুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। আবার সুযোগ বুঝে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এসব পণ্য কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন বলেও খবর রয়েছে।
মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট, কালোবাজারি করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছেন উচ্চ আদালত। ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে বাজার তদারকির জন্য কর্তৃপক্ষের মনিটরিং টিমকে সব সময় সক্রিয় থাকতে হবে, অন্যদিকে ক্রেতাদেরও আতঙ্কজনিত ক্রয় থেকে বিরত থাকতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ভোক্তাদেরও।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভোক্তাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, তাদের কারণে যেন পণ্যের দাম না বাড়ে। কেউ যাতে ১০ দিনের পণ্য একদিনে ক্রয় না করেন। এতে বাজারে বাড়তি চাহিদার সৃষ্টি হবে। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াবেন। ব্যবসায়ীদের এ সুযোগ দেয়া যাবে না। আর সরকারি তদারকি সংস্থাকেও সজাগ থাকতে হবে। যাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব দেখিয়ে কেউ অসাধু পন্থায় ভোক্তার পকেট কাটতে না পারে। এমনটা হলে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি, তাদের জন্য মাস্ক পরা অত্যাবশ্যকীয় নয়, বরং এতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা, যেগুলো বাতাসে ঘুরে বেড়ায়, তা সার্জিক্যাল মাস্ক পরলেও আটকানো সম্ভব নয়। ফলে মাস্ক পরে অসতর্কভাবে ঘুরে বেড়ালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রকৃতপক্ষে যাদের ইতিমধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেছে, তাদেরই মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, যাতে তাদের হাঁচি-কাশি থেকে চারপাশের মানুষ সুরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবাদানকারী ব্যক্তিদেরও মাস্ক পরতে হয়। বস্তুত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা।
সাধারণ মানুষের আতঙ্কজনিত ক্রয়ের কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা মাস্কের সংকটে পড়তে পারেন, এটা সবাইকে গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ মানুষের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। একইভাবে হাত পরিষ্কার করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সাসলও অত্যাবশ্যকীয় নয়, সাবানই যথেষ্ট। সাধারণ মানুষ এ বিষয়গুলো অনুধাবন করলে বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সংকট সৃষ্টি হতো না।
বস্তুত যে কোনো জরুরি সময়েই মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রী ক্রয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর সব সময় এর সুযোগ নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রকৃতপক্ষে ভোক্তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই সবার উচিত পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সচেতনতা কাম্য।
ক্যাব-এর ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র থেকে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যে, কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ যেকোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখলে অভিযোগ করুন অভিযোগ কেন্দ্রের ০১৯৭৭ ০০৮০৭১ নম্বরে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযোগ নিস্পত্তিতে বিনা খরচে তারা ভোক্তাকে সব ধরনের সহায়তা করবে। অভিযোগ প্রমাণীত হলে ভোক্তা পাবেন জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ।
(খবর : ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র, নিউজ সেল)