ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর বুধবারঃ ভোক্তা অধিকার রক্ষা সংগঠন হিসেবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তিতে একটি ‘কলসেন্টার’ চালু করেছে। যেখানে একজন ভোক্তা খুব সহজেই তাঁর অভিযোগ করতে পারেন এবং বিনা মূল্যে পরামর্শ এবং অভিযোগটি যথাযথভাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে দায়ের করা পর্যন্ত তাঁরা নিরলসভাবে সচেষ্ট আছেন সূচনালগ্ন থেকেই।
অভিযোগ দায়ের পরবর্তী ধাপে, অধিদপ্তরে তা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সেখানে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে থাকেন। এমনকি, ভোক্তারা অভিযোগ ছাড়াও বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শের জন্য ফোন দিলেও এখান থেকে সেবা পেয়ে থাকেন। কলসেন্টারের ভোক্তা সেবার প্রদান, অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তি শুনানির ওপর ভিত্তি করে মাসিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়ে থাকে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর নিয়মিত কার্যক্রম, ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির কার্যক্রমের প্রতিফলন স্পষ্ট হয় এ প্রতিবেদনে। ব্যবস্থাপক অরুনিমা ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কলসেন্টারের প্রতি মাসের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে তাঁর পাঠানো প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে ‘ভোক্তাকণ্ঠে’ প্রকাশিত হবে।
‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র- কলসেন্টার আগস্ট প্রতিবেদন’ গত আগস্ট ২০১৯-এ কল সেন্টারে অভিযোগ জানাতে ভোক্তাদের মোট ফোন এসেছে ১৬০টি । এছাড়া অনলাইন থেকে পাওয়া মোট অভিযোগের সংখ্যা হলো ৭০টি। অনলাইন হতে প্রাপ্ত মোট অভিযোগের শ্রেণী ও গুরুত্ব অনুযায়ী ২৩টি অভিযোগ দায়ের করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, সরাসরি অভিযোগ জানাতে কলসেন্টার অফিসে এসেছেন মোট ৮জন। অর্থাৎ সর্বমোট ২৬১ জন ভোক্তা তাঁদের অভিযোগ জানিয়েছেন অথবা পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেককেই তথ্য ও পরামর্শভিত্তিক প্রাথমিক সেবা প্রদান করা হয়েছে।
আগস্ট ২০১৯-এ সর্বমোট ২৬১ টি ভোক্তা অভিযোগ ও পরামর্শের চাহিদার বিপরীতে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে দায়েরযোগ্য মোট ৩১ টি অভিযোগ অভিযোগ ফর্ম পূরণ সহকারে প্রেরণ করা হয়েছে। এই অভিযোগ সমূহ এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
কলসেন্টারের নীতিমালা অনুসারে, অভিযোগকারী ভোক্তাকে প্রতি ১৫ দিন অন্তর তাঁর দায়েরকৃত অভিযোগের অবস্থা জানিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ভোক্তা অভিযোগের বিষয়ে কোন তথ্য জানতে চাইলে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য সরবরাহ করা হয়। আগস্ট ২০১৯-এ এমন সেবা পেয়েছেন মোট ৯৫ জন ভোক্তা। আগস্টে শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতীত কলসেন্টারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে মোট ২২ কার্যদিবস। এ সময়ের মাঝে ভোক্তারা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এনেছেন বিভিন্ন ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত এবং অনলাইনভিত্তিক বাজার/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বিগত সময়ের নিষ্পত্তি হওয়া অভিযোগ– জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ‘ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র : কল সেন্টার’-এর পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে মোট ৪০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়, এর সঙ্গে একই বছরের ডিসেম্বর মাসে যুক্ত হয় আরও ২০টি নতুন অভিযোগ। ২০১৯-এর জানুয়ারি মাসে দায়ের করা হয়েছে আরও মোট ২২টি অভিযোগ। এছাড়াও ২০১৯-এর ফ্রেব্রূয়ারি মাসে দায়ের করা হয়েছে আরও মোট ১০টি অভিযোগ।এসব অভিযোগের মধ্যে ৮টির শুনানী সম্পন্ন হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ৭টি অভিযোগ। এর মধ্যে ৩টি অভিযোগের ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে।
জানুয়ারি মাসে শুনানি হয়েছে ৫টি অভিযোগের। নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ২টি অভিযোগ। ফ্রেব্রূয়ারি মাসে শুনানি হয়েছে ৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ২টি অভিযোগ। আর দায়েরের আগেই সমাধান হয়ে গিয়েছে মোট ৭টি অভিযোগ। এপ্রিল মাসে শুনানি হয়েছে ১৬টি। ২টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। ৪ জন ভোক্তা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে যার আর্থিক মূল্য ৭৫,০০০ টাকা। মে মাসে শুনানি হয়েছে ৭টি।
জুন মাসে শুনানি হয়েছে ৩০টি। ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।জুলাই ও আগস্ট মাসে শুনানী হয়েছে আরও ১০টি।৩ টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১০ মাসে মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১,৫০,০০০ টাকা জরিমানা করে ট্রাইব্যূনাল। জরিমানার অর্থ থেকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ভোক্তারা মোট পান ৩৭,৫০০ টাকা। ভোক্তাকে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ১৯ টি প্রতিষ্ঠান সমঝোতা করে।
কল সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর ২০১৮ থেকে। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি সাড়া জাগিয়েছে দেশব্যাপী ভোক্তাদের মাঝে। কার্যক্রম শুরুর মাসে ২২৭জন ভোক্তা কল সেন্টারে যোগাযোগ করেন। এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোক্তারা কলসেন্টারে যোগাযোগ করছেন।
‘ভোক্তাকণ্ঠের’ পক্ষ থেকে কলসেন্টারের ব্যবস্থাপক অরুনিমা ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অভিযোগ করে ভোক্তারা এখন সেবা পাচ্ছেন, শুধু তাই নয় তাঁদের অভিযোগ যথাযথভাবে দায়ের, নিয়মিত খোঁজ নেয়া এবং তাৎক্ষণিক তথ্য অভিযোগ দায়েরকারীকে জানানোর কাজটি কলসেন্টার থেকে নিয়মিত করা হয়। একদিকে যেমন সেবাগ্রহীতাদের আস্থা বাড়ছে একইসাথে আমরা মনে করছি, এই সেবা প্রাপ্তির তথ্য জনগণের মধ্যে আরও বেশি করে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’ ভোক্তাস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
ভোক্তা যদি কোনো কিছু ক্রয় করে ক্ষতি বা প্রতারণার শিকার হন, তাহলে ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র কলসেন্টারে জানাতে পারেন সার্বিক সহযোগিতার জন্য। ক্যাব-এর ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি কলসেন্টার-এর সহায়তায় অভিযোগ দায়ের করতে পারেন,ই মেইল [email protected] ফোন : ০১৯৭৭০০৮০৭১, ০১৯৭৭০০৮০৭২