নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারের উত্তাপ সইতে না পেরে মধ্যবিত্তরাও টিসিবির ট্রাকের পেছনে দৌঁড়াচ্ছেন।
মঙ্গরবার (২৯ মার্চ)জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সুজন ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনদুর্ভোগ ও করনীয়’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে থেমে নেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে। জীবন-জীবিকা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
তিনি বলেন, প্রতিবছর পবিত্র মাহে রমজান মাস আসার অনেক আগেই নিত্যল্পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর রমজানে এই নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো প্রতিবছর নানারকম অঙ্গীকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। যে কোনো পূজা-পার্বন-ঈদ উপলক্ষে বাজারের চাবিকাঠি চলে যায় অশুভ চক্রের হাতে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে-এ যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। বেশকিছুদিন ধরেই লাফিয়ে লাফিয়ে, দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। উৎসব, পূজা-পার্বন উপলক্ষে সব দেশেই কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। পণ্যগুলো শুধু নিছক উপহারের পণ্য, নিত্যপণ্য নয়। প্রতিদিন এসমস্ত পণ্য কেনা হয় না। কেবল বিশেষ দিনেই কেনা হয় তাই ওই পণ্যগুলোর দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে না। এদিক দিয়ে আমাদের দেশ ভিন্নতর। দামি বিলাসী পণ্য নয়, সুযোগ পেলেই সবগুলো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রতি বছরই রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবারও ব্যত্যয় হয়নি, রমজান আসার আগেই ইফতারি ও সেহরিকে সামনে রেখে নতুনভাবে ভোজ্যতেল সয়াবিন, পাম অয়েল, পেঁয়াজ, আটা-ময়দা ও ডালের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যাপ্ত মজুত, আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও সরবরাহ লাইনে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কিংবা নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে চাল, চিনি, মসুর ডাল, প্যাকেট আটা ও ময়দার দাম। দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নাই। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে টানা ছয় মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে আবার এখন যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের অজুহাত। সম্প্রতি ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও রিফাইনারীরা ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। আর তখন থেকেই বাজারে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে সরকারের ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মিল ও আমদানিকারক পর্যায়ে তদারকির পর বাজারে ভোজ্যতেলের প্রাপ্তি দৃশ্যমান হয়।
এসময় তিনি সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারীর ঢেউ সামলে স্বাভাবিক আয়ে ফিরতে লড়াই করছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাদের এ লড়াই আরও কঠিন করে তুলেছে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ। চাল, ডাল, তেল, আটা থেকে শুরু করে সবকিছুর নাম ক্রমাগতভাবেই বেড়েই চলেছে। বাজারের উত্তাপ সইতে না পেরে মধ্যবিত্তরাও টিসিবির ট্রাকের পেছনে দৌঁড়াচ্ছেন। নিত্যপণ্য পেতে সেখানেও হাহাকার। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে অনেকে ফিরছেন খালি হাতে। এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যমূল্যের অস্থিরতা সামলাতে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। এরই মধ্যে ভোজ্যতেলসহ চিনি ও ছোলার ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতে আমদানিতে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। নিত্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটিও করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে সারাদেশে বাজার তদারকি জোরদার করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পণ্য বেচাকেনায় পাকা রসিদের ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্যের দামে এসবের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব চোখে পড়ছে না। নিত্যপণ্যের নামে এখনো পুড়ছে প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষ। দীর্ঘ হচ্ছে সাধারণ, সীমিত ও প্রান্তিক আয়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক সংগঠন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।