করোনা মহামারির কারণে আর্থিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে থমকে যায় পুরো বিশ্ব অর্থনীতি। বন্ধ হয়ে যায় অনেক প্রতিষ্ঠান। দেউলিয়া হওয়া ঠেকাতে ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে কর্মী ছাঁটাই করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছু প্রতিষ্ঠান কমিয়ে দেয় কাজের সময় ও কর্মীদের বেতন। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়েন কোটি কোটি শ্রমিক। বর্তমানে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এ সময়েও সব শ্রমিক তাদের কাজ ফিরে পাননি। আর এতে অতিরিক্ত ১০ কোটি ৮০ লাখ শ্রমিক দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, করোনা সংকটে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার কঠিন। ২০২৩ সালের আগে কর্মসংস্থান মহামারির আগের পর্যায়ে ফিরে আসবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
আইএলওর’ বার্ষিক ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেকারত্বের সংখ্যা আরও বাড়বে। এটা মহামারি না হলে যে সংখ্যা দাঁড়াত, তার চেয়ে ৭ কোটি ৫০ লাখ বেশি। এমনকি আগামী বছরও এ সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়বে। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ মহামারি না হওয়ার তুলনায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বেশি বেকার থেকে যাবে।
আইএলও বলছে, করোনা একটি জনস্বাস্থ্য সংকট ছিল না। এটা কর্মসংস্থান ও মানবসংকটও ছিল। এ কারণে সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজ ত্বরান্বিত করা, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল সদস্যদের এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক খাতগুলোকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এসব প্রচেষ্টা ছাড়া উচ্চ দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মতো মহামারির দীর্ঘকালীন প্রভাবগুলো বছরের পর বছর ধরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
আইএলও বলছে, বিশ্বজুড়ে বেকারত্বের সংখ্যা ২০২২ সালে ২০ কোটি ৫০ লাখে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটা ২০১৯ সালে ১৮ কোটি ৭০ লাখের চেয়ে অনেক বেশি। তবে সরকারি বেকারত্বের এ পরিসংখ্যানের চেয়ে বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
অনেক মানুষের চাকরি থাকলেও তাদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় ২০২০ সালে কাজের সময়সীমা ৮ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। এটা ২৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষের পূর্ণকালীন কাজের সমান। বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টা আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি। চলতি বছরের শেষ দিকেও কর্মঘণ্টা ১০ কোটি পূর্ণকালীন কাজের চেয়ে কম থাকবে।