ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ‘মা’ একটি ছোট্ট শব্দ মায়া অনেক। এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা-দরদ, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব সুখ। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোন কিছুর তুলনা চলে না। মায়ের তুলনা মা নিজেই।
তবে একটি শিশু জন্মদানে একজন মাকে অনেক কষ্ট এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একটি বড় সময় নিজের গর্ভে রেখেই একটি জীবনকে লালন করেন মা। এই গর্ভধারণের সময়, প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়েদের দরকার নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ। নিয়মিত পরামর্শ গ্রহণ জটিলতা তৈরির শঙ্কা কমায়।
জাতিসংঘ এবং ডব্লিউএইচও’র তথ্য অনুসারে, শিশু জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিদিন প্রায় আটশ নারী মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৩ সালে বিশ্বে দুই লাখ ৮৯ হাজার নারী গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের জটিলতার কারণে মারা যান। প্রতি বছর অন্তত সাত মিলিয়ন নারী প্রসব পরবর্তী গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া আরও ৫০ মিলিয়ন নারী প্রসবের পর নানারকম স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী গর্ভধারণ ও প্রসবের জটিলতার কারণে মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, বাংলাদেশে ধারাবাহিক ভাবে মাতৃমৃত্যু কমছে। সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালে যেখানে ৮৮৪ জন মায়ের মৃত্যু হয়, সেখানে গত বছর তা কমে ৭৮৮ জনে নেমেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০১০ সালে প্রতি লাখে মাতৃ মৃত্যু ছিল ১৯৪ জন। এক দশকে তা কমে ১৬৫ জনে নেমেছে। তবে গ্রামে এখনো এই হার ১৯১ জন, শহরে যা ১২৩ জন।
এদিকে, গর্ভবতী নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ গ্রহণ বাংলাদেশে খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এর ফলে গর্ভধারণের সময়, প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে জটিলতার আশঙ্কা বাড়ছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়েই জনবল ও অবকাঠামোগত নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জ থাকে। এর মধ্যে প্রায় দুই বছর করোনা মহামারির কারণে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা আরও ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে গর্ভবতী নারীদের চার দফা সেবা গ্রহণের মধ্যে প্রসব পূর্ব সেবা নেওয়ার হার ২০২০ সালে প্রথমবার সেবা নেওয়ার হার ২৬ শতাংশ কম ছিল। দ্বিতীয়বার ২৫ শতাংশ, তৃতীয়বার ২৬ শতাংশ এবং চতুর্থবার ২৪ শতাংশ কম ছিল। এরপর ২০২১ সালে এসে প্রথমবার সেবা নেওয়ার হার বেড়েছে। তবে পরের তিন দফায় আগের মতোই কম। গত বছর প্রথমবার সেবা নেন ১২ লাখ ১৫ হাজার প্রসূতি নারী। সেখানে পরের তিন দফায় কমে তা নামে পাঁচ লাখেরও নিচে।
স্বাস্থ্যবিদরা জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৭০ শতাংশে নিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সরকারিতে এবং ৮৫ শতাংশই বেসরকারি হাসপাতালে হয়ে থাকে।